আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক যুদ্ধের চেহারা দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে ড্রোন প্রযুক্তি। গোটা বিশ্বজুড়ে দেশগুলো নজরদারি, যুদ্ধ এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলস বা ড্রোনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন আটটি দেশ এই ড্রোন বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ড্রোন প্রযুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বনেতা। এমকিউ-৯ রিপার-এর মতো UAV ব্যবহার করে তারা নজরদারি এবং নির্ভুল হামলা চালাচ্ছে। পেন্টাগন ক্রমাগত স্বয়ংক্রিয় ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সমন্বিত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে, যার ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ছে এবং সৈন্যদের ঝুঁকি কমছে।
চীন
চীন খুব দ্রুত তাদের ড্রোন কর্মসূচি বিস্তৃত করেছে। উইং লুং এবং সিএইচ-৫-এর মতো মডেল শুধু সেনাবাহিনী নয়, রপ্তানির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বেইজিং এখন এমন দীর্ঘ-পাল্লার যুদ্ধ ড্রোনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যেগুলো শত শত মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ইজরায়েল
ড্রোন যুদ্ধের পথিকৃৎ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইজরায়েল। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে নজরদারি ও টার্গেটেড স্ট্রাইকের জন্য তারা ড্রোন ব্যবহার করে আসছে। এলবিট সিস্টেমস ও ইজরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মতো প্রতিষ্ঠান স্টেলথ ও লয়টারিং মিউনিশন ড্রোন নিয়ে নিয়মিত নতুনত্ব আনছে।
তুরস্ক
ড্রোন রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেছে তুরস্ক। বায়রাকতার টিবি২ আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সিরিয়া থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত বিভিন্ন সংঘাতে তুর্কি ড্রোন কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কম খরচে নির্ভুল হামলা চালানোর ক্ষমতার কারণে এগুলো এখন বহুল আলোচিত।
আরও পড়ুন: আপনার চ্যাট সাজিয়ে দেবে হোয়াটসঅ্যাপ, জেনে নিন নতুন এই ফিচার
রাশিয়া
রাশিয়া নজরদারি ও যুদ্ধ উভয় ধরনের ড্রোনে বিনিয়োগ করছে। ওরিয়ন এবং ওখোটনিক স্টেলথ UAV তাদের প্রধান প্রকল্প। মস্কো চায় তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে, যেখানে ড্রোন বিমান ও স্থলবাহিনীর অভিযানের সঙ্গে পরিপূরক ভূমিকা রাখবে।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য ‘প্রটেক্টর আরজি এমকে১’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের ড্রোন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। এই UAV মূলত গোয়েন্দা, নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহ মিশনের জন্য তৈরি। রয়্যাল এয়ার ফোর্সের যুদ্ধ অভিযানে ভবিষ্যতে এই ড্রোনকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
ভারত
ভারত দেশীয় ড্রোন উৎপাদন ও সীমান্ত এলাকায় কৌশলগত মোতায়েনের ওপর জোর দিচ্ছে। ডিআরডিও-র রুস্তম ড্রোন এবং ইজরায়েল থেকে আমদানি করা হেরন ড্রোন সীমান্তে নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় এগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে।

ফ্রান্স
ফ্রান্স লড়াইয়ের জন্য তৈরি ড্রোনে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। তাদের তৈরি নইউরন ইউসিএভি স্বয়ংক্রিয় ও স্টেলথ মিশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত সামরিক সক্ষমতার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে প্যারিস ড্রোন প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ড্রোন প্রযুক্তি এখন আর ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, বরং আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত প্রতিটি দেশ নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী UAV তৈরি ও ব্যবহার করছে। নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কিংবা নির্ভুল হামলা—সবক্ষেত্রেই ড্রোন সামরিক কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করছে। আগামী দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে মানবসৈন্যের ঝুঁকি কমাতে এবং আকাশ প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব আরও বাড়বে।
