বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীতে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ ক্যানসার। ক্রমশ লাফিয়ে বাড়ছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, শরীরচর্চার অভাব সহ আধুনিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমশ এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। যতই সর্বত্রই ক্যানসার প্রতিরোধের নানা সচেতনমূলত প্রচার চালানো হোক, তবুও মারণ রোগের উর্ধ্বমুখী গ্রাফকে বশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু খাদ্যাভাস কিংবা জীবনযাপন নয়, রোজকার ব্যবহৃত নানা জিনিস থেকেও শরীরে ক্যানসারের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে। সুস্থ থাকতে বাড়ি থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই সব জিনিস দূর করা দরকার।
১. ননস্টিক বাসনঃ অনেকদিন ব্যবহারের ফলে ননস্টিক বাসনে চিড় ধরে যায় বা দাগ হয়ে যায়। কম-বেশি প্রায় সকলের বাড়িতেই এমন ননস্টিক রয়েছে। আপনিও যদি এই ধরনের ননস্টিক ব্যবহার করেন তাহলে খুব সাবধান! কারণ চিড় ধরা বা দাগ পড়া নন-স্টিকের বাসন ব্যবহার করলে গড়ে ১০ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। আর তা যে শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর তা বলাই বাহুল্য। এটি শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় জমা হতে থাকলে ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি করতে পারে। তাই রান্নার সময় ও পরিষ্কার করার সময় যেন নন-স্টিক পাত্রের উপরিতলে কোনও ধরনের আঁচড় না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
২. সুগন্ধি মোমবাতিঃ অনেক বাড়িতেই অন্দরসজ্জার জন্য সুগন্ধি মোমবাতি ব্যবহার করা হয়। কেমিক্যাল ব্যবহার করে তৈরি সুগন্ধি মোমবাতিতে সাধারণত থ্যালেট থাকে। যা আমাদের শরীরের থাইরয়েড ও অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নষ্ট হয়। বাড়িতে এই ধরনের মোমবাতি থাকলে তা অজান্তেই হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়, ক্ষতি হয় প্রজননতন্ত্রের। তাই এই ধরনের মোমবাতি ঘরে না রাখাই উচিত। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতিতে সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি বানাতে পারেন।
৩. প্লাস্টিকের বাসন ও জলের বোতলঃ প্লাস্টিকের বাসন বিশেষ করে প্লাস্টিকের টিফিন বাক্স অনেকে ব্যবহার করেন। যা শরীরের জন্য মোটেই ভাল নয়। আর সেই পাত্রে গরম করলে ক্ষতি আরও বাড়ে। কারণ প্লাস্টিক পাত্র থেকে থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক নির্গত হয়। খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশ করলে, তা থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. প্লাস্টিক চপিং বোর্ডঃ অনেকের বাড়িতেই প্লাস্টিকের চপিং বোর্ড ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে এই ধরনের চপিং বোর্ড ছুরির আঘাতে নষ্ট হতে শুরু করে। আর এই ক্ষতিগ্রস্ত বোর্ডে কিছু কাটলে তাতে সরাসরি মাইক্রোপ্লাস্টিক চলে যায়। যা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

৫. অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলঃ দীর্ঘক্ষণ ভাল রাখতে অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলে অনেকে খাবার মুড়িয়ে রাখেন। রাসায়নিক পদার্থ পলিফ্লুরোঅ্যালকার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের সংস্পর্শে আসার ফলে এই ধরনের জিনিসপত্র থেকে ক্ষতিকর এই রায়াসনিক খাবারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। খাবার থেকে তা শরীরে প্রবেশ করছে এবং লিভারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। যার পরিণতি লিভার ক্যানসারও হতে পারে।
৬. রিফাইন্ড অয়েলঃ প্রায় সব বাঙালির বাড়িতেই ভাজাভুজিতে ভাজতে রিফাইন্ড তেল ব্যবহার করা হয়। রোজের ব্যবহারের এই সাদা তেল উচ্চ তাপমাত্রায় ফোটালে অ্যালডিহাইড যৌগ তৈরি হয়, যা পেটে গিয়ে বিষক্রিয়া করে। এই তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মাত্রাতিরিক্ত শরীরে গেলে খারাপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া তেল শুদ্ধিকরণের প্রতিটি ধাপে নানা রকম রাসায়নিক মেশানো হয়, যা শরীরে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
