আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভরা অফিস। যে যার মতো কাজে ব্যস্ত।‌ সকালেই টিমের মিটিং চলছিল। মিটিংয়ের মাঝে বিরতি চেয়েছিলেন তরুণ কর্মী। 'একটু আসছি' বলেই মিটিং থেকে বেরিয়ে যান। এরপরই চরম পদক্ষেপ করলেন তিনি। যার পরেই অফিসের সকলে আঁতকে ওঠেন। 

জানা গেছে, অফিসের মিটিংয়ের মাঝে শরীরে‌ অস্বস্তি হচ্ছে বলে বিরতি চেয়েছিলেন ২৩ বছরের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। মিটিং থেকে বিরতি নিয়েই সোজা পৌঁছে যান অফিসের ছাদে। সেখান থেকে আচমকা নীচে ঝাঁপ দেন তিনি। উঁচু বিল্ডিং থেকে নীচে পড়েই মর্মান্তিক পরিণতি হল তাঁর। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের পুনেতে। পুলিশ জানিয়েছে, ২৩ বছর বয়সি মৃত তরুণের নাম, পীয়ূস অশোক আওয়াড়ে। তিনি পেশায় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পুনের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। পুনের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেন। এরপর গত এক বছর ধরে শহরের এক নামী সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। 

আরও পড়ুন: ফার্স্ট গার্ল, তাও শিক্ষিকার বকুনি! সহপাঠীদের সামনেই মুখে ছুড়ে মারেন উত্তরপত্র, অপমানে যা করল দশম শ্রেণির ছাত্রী

অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার সুনীল কুরাডে জানিয়েছেন, পীয়ূস গত জুলাই থেকে আটলাস কপকো প্রাইভেট লিমিটেডে কাজ করতেন। পুনের হিঞ্জেওয়াড়ি আইটি হাবেই এই নামী সংস্থায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার সকাল দশটা নাগাদ অফিসে মিটিং চলছিল। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মিটিংয়ের মাঝে হঠাৎ বিরতি চেয়েছিলেন পীয়ূস। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বুকে আচমকা ব্যথা করছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই তিনি ফিরে আসবেন মিটিং। তারপর আর ফেরেননি। মিটিং থেকে বেরিয়েই চরম পদক্ষেপ করেন। 

অফিসের আটতলায় ছাদে পৌঁছে যান। সেখান থেকে নীচে ঝাঁপ দেন পীয়ূস। বিকট শব্দ শুনেই সহকর্মীরা ছুটে আসেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

অফিসে অত্যধিক কাজের চাপে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অতীতে একাধিক ইঞ্জিনিয়ার, কর্মীকে আত্মঘাতী হতে দেখা গিয়েছে। এমনকী অফিসের টক্সিক কালচার, কাজের চাপ, বসের দুর্ব্যবহার, পলিটিক্সের শিকার হয়েই যে চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাও জানিয়েছেন অনেকে। পীয়ূসের মৃত্যুর নেপথ্যেও কি সেই অফিসের কাজের চাপ, বসের হেনস্থা? প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, 'এখনই তা বলা সম্ভব নয়। হবে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। নেপথ্যে অফিসের কাজের চাপ, হেনস্থা দায়ী ছিল বলে এখনও পর্যন্ত মনে হয়নি। একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। সুইসাইড নোটটি তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের জামার পকেটে ছিল। সেই চিঠিটি ঘিরে তদন্ত শুরু করা হবে। তাঁর আত্মীয়রা এসে পৌঁছেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে।' 

আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে কী লিখেছিলেন পীয়ূস? তিনি লিখেছিলেন, 'আমি আরও ভাল কিছু করতে পারতাম। তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারতাম। কিন্তু তোমরা আমার থেকেও আরও ভাল সন্তান পেতে পারতে‌। আমি সবকিছুতেই বিফল। কিছুই হল না আমার। এর পিছনে আর বেশি সময় নষ্ট করো না। নিজেদের খেয়াল রেখো‌।' কার বা কাদের উদ্দেশে এই চিঠি তিনি লিখেছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে পরিবারের জন্য কিছু কথা লিখেছেন। ঘটনার মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।