আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্লাসের টপার। মেধাবী ছাত্রী সকলেরই প্রিয় পাত্রী। শুধু যে পড়াশোনায় মনোযোগী, তাইই নয়, নম্র, ভদ্র ব্যবহারের জন্যেও সকলের সুনজরে ছিল সে। শিক্ষিকারাও প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন। এর মাঝেই ঘটল বিপত্তি। হঠাৎ একদিন সহপাঠীদের সামনেই তাকে বকাঝকা করেন এক শিক্ষিকা। সেই বকুনি সহ্য করতে না পেরেই চরম পদক্ষেপ করল সে।
জানা গেছে, সহপাঠীদের সামনেই শিক্ষিকা ছাত্রীর মুখে ছুড়ে মেরেছিলেন উত্তরপত্র। সঠিক উত্তর লেখা সত্ত্বেও, তার বিরুদ্ধে চিটিং করার অভিযোগ তুলেছিলেন শিক্ষিকা। সকলের সামনে তুমুল বকাঝকা করায়, চরম অপমানিত বোধ করেন ছাত্রী। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই অপমানে আত্মঘাতী হল সে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২৪ জুলাই ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিপুরায়। পুলিশ জানিয়েছে, দশম শ্রেণির ছাত্রীটি সোনাপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই সে ক্লাসের টপার। মেধাবী ফার্স্ট গার্লের প্রশংসা বরাবরই পঞ্চমুখ ছিলেন শিক্ষিকা। দিন কয়েক আগে স্কুলের মধ্যেই চরম অপমানের শিকার হয় সে।
দশম শ্রেণির ছাত্রীর সহপাঠীরা জানিয়েছে, জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা বীনা দাস পাতারি চরম বকাঝকা করেন তাকে। পরীক্ষায় সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছিল সে। কিন্তু শিক্ষিকার অভিযোগ, সে চিটিং করেছে। কোনও সহপাঠীর থেকে উত্তর জেনে লিখেছে। বই দেখেও হুবহু উত্তর টুকতে পারে। চিটিংয়ের অভিযোগে সকলের সামনে শিক্ষিকা তীব্র নিন্দা করেন তাকে। এমনকী সহপাঠীদের সামনেই তার মুখে উত্তরপত্র ছুড়ে মারেন। সে বারবার জানিয়েছিল, নিজের সব প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। কারও থেকে কোনও সাহায্য নেয়নি। কিন্তু শিক্ষিকা তার কথার গুরুত্ব দেননি।
জানা গেছে, স্কুলেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল ছাত্রীটি। স্কুল ছুটির পর বাড়িতে গিয়েই চরম পদক্ষেপ করে সে। বিলোনিয়া সাব ডিভিশনের বরপাথারি- সোনপুর এলাকায় তার বাড়ি। বিকেল বেলায় বাড়িতে পৌঁছেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে ১৫ বছরের কিশোরী। খানিকক্ষণ পর টের পায় তার পরিবার।
তড়িঘড়ি করে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বরপাথারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিল পরিবার। এরপর সেখান থেকে শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। সেখানে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে, আগরতলার জিবি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের চেষ্টা সত্ত্বেও, ঘটনার পরদিনই হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে।
এরপরই রাজনগর পিআর বাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রীর পরিবার। অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, ছাত্রীর পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। বাবা পেশায় কৃষক। আর্থিক অনটনে সংসারে সব খরচ চালাতে পারেন না। তবে মেয়ের পড়াশোনায় কখনও বাধা দেননি। বরং মেয়ের পড়ার জন্য সংসারের খরচ বাঁচিয়ে বই, খাতা কিনে দিতেন।
এই ঘটনার পর জেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শোকের ছায়া মৃত ছাত্রীর গ্রামেও। ঘটনাটি জানতে পেরেই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন প্রাক্তন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও কংগ্রেসের বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। হাসপাতালেও ছাত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। মৃত ছাত্রীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
