আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্ষার জলে ডুবে থাকা রাস্তাঘাটে পা রাখতে সাহস পাচ্ছেন না মুম্বইবাসী। একের পর এক এলাকায় জল জমে তৈরি হয়েছে ছোটখাটো পুকুর। কিন্তু জমা জলের চেয়েও বড় সমস্যায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাণিজ্যনগরীতে। এই জলবন্দি অবস্থাতেই বিপজ্জনক এক পরজীবী সংক্রমণের মুখে পড়তে পারেন শহরবাসী, এমনই আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কারণ, হঠাৎ করেই বেড়ে মুম্বইতে বেড়ে গিয়েছে ‘নিউরোসিস্টিসারকোসিস’-নামের এক মারাত্মক মস্তিষ্কের রোগ।

কী এই রোগ?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগের নেপথ্যে রয়েছে এক অতিক্ষুদ্র পরজীবী। এই পরজীবী আসলে শূকরের ফিতাকৃমি। নাম তার টেনিয়া সোলিয়াম। সাধারণত এই ফিতাকৃমির ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে আধসিদ্ধ শূকরের মাংস, না ধোয়া শাকসবজি বা দূষিত জলের মাধ্যমে। বর্ষাকালে যখন নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়, তখনই এই পরজীবীর ডিম খাদ্যের সঙ্গে অনায়াসে মানুষের দেহে ঢুকে পড়ে।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
কী হয় এই রোগে?
মুম্বইয়ের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্ষাকালে অনেকেই খাদ্যসুরক্ষা সংক্রান্ত সাধারণ নিয়ম মানেন না। তার ফলেই এই সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। পেটে ঢুকে এই ডিম রক্তনালীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং সিস্ট তৈরি করে, যার ফলে শুরু হয় খিঁচুনি, ক্রমাগত মাথাব্যথা। চিকিৎসা সময় মতো শুরু না হলে স্নায়বিক অক্ষমতাও দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
কীভাবে ধরা পড়বে?
এই রোগকে অনেকেই মৃগীরোগ বলে ভুল করেন। ফলে সঠিক সময়ে এমআরআই বা সিটি স্ক্যান না করালে রোগ ধরা পড়ে না। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নিউরোসিস্টিসারকোসিসের উপসর্গ অনেক সময় ম্যালেরিয়া বা ভাইরাল ফিভারের সঙ্গেও মিলে যেতে পারে, তাই সঠিক রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা আরও বাড়তে পারে।
কোথায় দেখা যায় এই রোগ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই রোগ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বেশি দেখা যায়। কারণ এই সব দেশে জঞ্জাল নিষ্কাশন, স্যানিটেশনের মতো পরিকাঠামো দুর্বল। খাদ্যনিরাপত্তাও মানা হয় না। সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলে পশুপালন। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার কিছু দেশে এটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসা কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগটি ভয়ানক হলেও প্রতিরোধযোগ্য। তবে তার জন্য দরকার সতর্কতা। বাজার থেকে কেনা সবজি ভাল করে ধুয়ে রান্না করা, শূকরের মাংস সম্পূর্ণ সিদ্ধ করা এবং পরিস্রুত জল খাওয়া এই রোগ দূরে রাখার এক নম্বর উপায়। একই সঙ্গে সরকার ও পুরসভার পক্ষ থেকেও দরকার যথাযথ পদক্ষেপ। বর্ষায় যেন জল জমে না থাকে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখা যায় এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালানো হয়, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতাল-সহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টারে ইতিমধ্যেই নিউরোসিস্টিসারকোসিসে আক্রান্ত বহু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বার্তা, “ঘন ঘন মাথাব্যথা বা হঠাৎ খিঁচুনি হলে তা উপেক্ষা করবেন না। দ্রুত নিউরো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।” কারণ, ফিতাকৃমির ডিম হয়তো চোখেও দেখা যায় না, কিন্তু সেটাই কখন মাথার ভেতরে নীরব বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেবে, তা ধরতে পারবেন না। কিছু বোঝার আগেই দেরি হয়ে যেতে পারে।