সেই প্রাচীনযুগে তামার পাত্রে জল পানের অভ্যাস ছিল। তবে মাঝে অবশ্য সেই অভ্যাস খানিকটা নড়বড়ে হয়েছিল। ইদানীং ফের তামার পাত্র বা বোতল ব্যবহারের চল শুরু হয়েছে। ঘরের টেবিলে তামার জগ কিংবা অফিসের ডেক্সে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে তামার বোতল। সারা রাত তামার গ্লাসে জল রেখে, সকালে সেই জল খাওয়ার রেওয়াজ মানছেন বহু বাড়ির সদস্যরা।
দেহে তামা বা কপারের পরিমাণ কমে গেলে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তামার পাত্র থেকে জল খেলে সেই ঘাটতি মিটবে। থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন হরমোনের সমস্যায় এই তামা অনেক উপকার দেয়। তামার সব থেকে বড় গুণ হল হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা। গ্যাস-অম্বল, হজমের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। তামার পাত্রে জল খাওয়া শুরু করলে এই সমস্যার চটজলদি সমাধান হতে পারে। তামায় থাকা উপকারী উপাদান খাদ্যনালিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলে কমতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও। প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকায় রোজ সকালে খালি পেটে তামার পাত্রে জল খেলে প্রদাহের সমস্যায় উপকার পাবেন। যারা বাতের সমস্যায় ভুগছেন আরাম পারেন তাঁরাও।
আরও পড়ুনঃ ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে আগে থেকেই জানান দেয় শরীর! কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন বিপদ সঙ্কেত
তামার পাত্রে রাখা জল পান করার একাধিক উপকার রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তে লোহিত কণিকার মাত্রা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় তামা বা কপার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে হার্টের সমস্যা, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের মতো বহু রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। ভাল রাখে হাড়ের স্বাস্থ্যও। তাই ক্রনিক বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তামার পাত্রে জল খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে শরীরের জন্য উপকারি হয় নিয়ম মেনে জল খেলে। সেই নিয়মে ভুল হলে হতে পারে উল্টো ফল। অর্থাৎ তামার পাত্রের কোনও উপকারই কাজে লাগবে না, যদি না সঠিকভাবে তামার পাত্র ব্যবহার করা হয়। কারণ ব্যবহারের ভুলে বাড়তে পারে গুরুতর রোগের ঝুঁকি।
তামার বোতলে জল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, বেশি মাত্রায় তামা শরীরে প্রবেশ করলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। এমনকী শরীরে বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তামার বোতল বা গ্লাস ব্যবহারের জন্য কী কী নিয়ম মেনে চলবেন জেনে নিন।

* সারা দিন ধরে তামার বোতলে জল খাওয়া উচিত নয়। এই অভ্যাস অজান্তে শরীরের বিপদ ডেকে আনে। এর ফলে পেটের সমস্যা, বমি হতে পারে। লিভার ও কিডনির উপরও প্রভাব পড়ে।
* তামার গ্লাসে লেবুর রস খাওয়া চলবে না। সকালবেলা অনেকের উষ্ণ জলে লেবুর রস এবং মধু দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু এই মিশ্রণ তামার গ্লাসে খেলে তা বিষের মতো কাজ করবে। যা পেটের জন্য বিপজ্জনক।
* নিয়মিত তামার বোতল ধোয়া উচিত। তবে বেশি মাজা-ঘষা করলে তামার উপকারী গুণ কমতে শুরু করে। তাই প্রতিবার ব্যবহারের পর পরিষ্কার জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। মাসে একবার নুন ও লেবু দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করুন।পূর্ণ।
