মিল্টন সেন: পোলবার মেঘসার সমবায় নির্বাচনে বিরোধী কোনও দল প্রার্থী না দেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব আসনেই জয় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। রবিবার ছিল এই সমবায়ের বোর্ড গঠনের নির্বাচন। মোট ৯টি আসনের জন্য ভোট হওয়ার কথা থাকলেও শুধুমাত্র তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরাই মনোনয়ন জমা দেন। ফলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সব আসনে তৃণমূল প্রার্থীরাই জয়ী হন। এই জয়ের আনন্দে এলাকায় ঢাক বাজিয়ে, সবুজ আবির উড়িয়ে বিজয় উৎসবে মেতে ওঠেন তৃণমূল সমর্থকেরা। তবে এই ‘নির্বাচন’ ঘিরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির স্থানীয় নেতা শুভজিৎ ভাওয়াল অভিযোগ করেন, ‘কবে মনোনয়ন জমা দেওয়া গেল, কবে ছিল প্রত্যাহারের দিন—এইসব কিছুই আমাদের জানানো হয়নি। সব চুপিচুপি করেছে তৃণমূল। এটাই ওরা সর্বত্র করছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতেই এই ধারা অব্যাহত রাখছে’।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দেবব্রত দাসের পাল্টা বক্তব্য, ‘মহানাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছে। তার ফলেই মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। ২০১৭ সালে সমবায়ে নির্বাচন হয়নি, তখন বোর্ড ছিল সিলেক্টেড। এবার নির্বাচন হয়েছে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ম মেনেই, নোটিফিকেশন, মনোনয়ন জমা, প্রত্যাহার—সবকিছু ছিল। কিন্তু বিরোধীরা কোনও আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে এমনটাই হয়। ফেসবুকে বসে দল হয় না, মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে হয়, যা তৃণমূল কংগ্রেস করে’।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে সিজা কামালপুর কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। মোট ৪৫টি আসনের মধ্যে ৩৩টিতে জয়ী হন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী। বাকি ১২টি আসনের মধ্যে ৬টিতে সিপিএম এবং ৬টিতে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। সিজা কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরিজিৎ দাস জানান, এই সমবায়ে ৬৮ বছর ধরে ভোট হয়নি। ১৯৫৭ সালে কৃষকদের সুবিধার্থে গঠিত হয়েছিল সিজা কামালপুর কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড। মূলত চাষিদের ঋণ প্রদান ও কৃষিকাজে সহায়তার উদ্দেশ্যেই এই সমবায়ের সূচনা। বোর্ড গঠনের মাধ্যমে চলত সমবায়ের কার্যক্রম। সদস্যদের মধ্যেকার বোঝাপড়াতেই গঠিত হত বোর্ড, তবে সচরাচর শাসকদলই প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির পদ দখলে রাখত।
সম্প্রতি বিজেপির তরফে রাজ্যের সব সমবায়ে ভোট করানোর দাবি তোলা হলে এই সমবায়েও নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৪৫ জন বোর্ড সদস্য নির্বাচনে এবার সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকলেও, প্রার্থীরা ছিলেন দলসমর্থিত। তৃণমূল ৪৫টি আসনেই মনোনয়ন জমা দিলেও, সিপিএম ও বিজেপি একত্রে সব আসনে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়। রবিবার খামারগাছি হাই স্কুলে সকাল থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। কড়া নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ফলপ্রকাশ হতেই স্পষ্ট হয়, প্রায় ৭০ শতাংশ আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। সিজা কামালপুর কৃষি সমবায় পুরোপুরি শাসক দলের দখলে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় নতুন বোর্ড গঠনের তোড়জোড়। দীর্ঘ ছয় দশক পর ভোটের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী সমবায়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
