আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় জওয়ানদের সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ পালিত হল ২৬তম কারগিল বিজয় দিবস। এই দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং দেশের তিন বাহিনীর প্রধানরা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স (আগের টুইটার)-এ লেখেন, “কারগিল বিজয় দিবসে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় মা ভারতের সেই বীর সন্তানদের অতুলনীয় সাহস ও বীরত্বের কথা, যারা দেশের গৌরব রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের দেশভক্তি আগামী প্রজন্মকে চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে। জয় হিন্দ!”
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, “এই দিনটি আমাদের শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার এক পবিত্র উপলক্ষ। তাঁদের অসাধারণ সাহস, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ দেশবাসীর অন্তরে চিরকাল বেঁচে থাকবে। জয় হিন্দ! জয় ভারত!” ড্রাসের কারগিল ওয়ার মেমোরিয়ালে আজ সকালে মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বিমানবাহিনী প্রধান এপি সিং এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা শহীদদের প্রতি মাল্যদান করেন। শহীদদের পরিবারের সদস্যরাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ
১৯৯৯ সালের মে মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ছদ্মবেশে কারগিল সেক্টরের উচ্চ পার্বত্য এলাকাগুলি দখল করে নেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী "অপারেশন বিজয়" শুরু করে এবং প্রায় দু’মাস ব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ২৬ জুলাই কারগিল পুনরুদ্ধার করে। এই যুদ্ধে ৫২৭ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ উৎসর্গ করেন। সেই বীর শহীদদের সম্মানেই প্রতি বছর ২৬ জুলাই পালন করা হয় কারগিল বিজয় দিবস।
আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয়েছে স্মরণসভা, দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। স্কুল ও কলেজগুলিতে বক্তব্য প্রতিযোগিতা, কুইজ এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে কারগিল যুদ্ধের তাৎপর্য বোঝানো হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় স্থানীয় প্রাক্তন সেনা সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী আজ ‘ই-শ্রদ্ধাঞ্জলি’ পোর্টাল এবং একটি কিউআর কোড-ভিত্তিক অডিও অ্যাপ চালু করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ শহীদদের গল্প শুনতে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। এই অ্যাপে যুদ্ধক্ষেত্রের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা এবং ভারতীয় সেনার বীরত্বের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, লাদাখের বাটালিক সেক্টরে ‘সিন্ধু ভিউপয়েন্ট’ আজ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা সরাসরি সীমান্ত অঞ্চল দেখতে পাবেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলগত অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।
এই বিশেষ দিনে সারা দেশজুড়ে মোমবাতি প্রজ্বালন, পদযাত্রা, শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণসহ নানা আয়োজন দেখা গেছে। অনেক নাগরিক নিজ উদ্যোগে সামাজিক মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। কারগিল বিজয় দিবস শুধু একটি সামরিক জয় নয়, এটি দেশের ঐক্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের এক জীবন্ত স্মারক। এই দিনে জাতি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়, যারা দেশের সীমান্ত রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, এবং সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল পথনির্দেশ।
