শিশুরা স্বভাবতই চঞ্চল। খেলার ছলে অনেক সময়েই কোনও জিনিস গিলে ফেলে দুর্ঘটনা ডেকে আনে। সম্প্রতি দিল্লিতে তেমনই একটি ঘটনা সামনে আসে। এক ৮ বছর বয়সি শিশু খেলার ছলে দুটি ৫ টাকার কয়েন এবং একটি ১০টাকার কয়েন গিলে ফেলে। প্রথম দিকে পরিবারের কেউ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কারণ শিশুর শরীরে তেমন কোনও উপসর্গ ছিল না। তবে কয়েকদিন পর বমি ও অস্বস্তি শুরু হলে পরিবারের সন্দেহ হয় এবং দ্রুত শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
চিকিৎসকরা এক্স-রে করে দেখেন, শিশুর পাকস্থলীতে তিনটি কয়েন আটকে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল ‘এন্ডোস্কপি’ পদ্ধতির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার ছাড়াই কয়েনগুলো বের করে আনেন। বর্তমানে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ বলে খবর।
এদিকে এই ঘটনাটি সামনে আসতেই হতবাক হয়ে গিয়েছেন সকলে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করেছেন যে শিশুদের সামনে কয়েন বা ছোট জিনিস পড়ে থাকতে দেওয়া উচিত নয়। সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শিশু যদি কয়েন গিলে ফেলে, প্রথমেই ঘাবড়ে না গিয়ে শান্ত থাকতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আসলে শিশুদের খাদ্যনালি বড়দের তুলনায় ছোট। এর ফলে খাদ্যনালিতে সহজে যে কোনও জিনিস আটকে যেতে পারে। সাধারণত পয়সা, বোতাম, পিন, ব্যাটারি, মাছের কাঁটা, হাড়, খেলনা বা খেলনার ছোট অংশ শিশুদের গলায় আটকে যায়। আটকানো বস্তুটি বড় হলে খাদ্যনালি বেয়ে নিচে নামতে পারে না। পিন, ব্যাটারি বা চুম্বক খাদ্যনালির নরম আবরণের ক্ষতি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যনালি ফুটো হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় শিশু কিছু গিলে ফেলেছে কিনা বা আসলে কিছু সমস্যা হয়েছে কিনা, তা অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন না।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে সর্তক হবেন
* শিশু ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে কিনা, বুকে ব্যথা বা বুকে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি আছে কিনা।
* খাদ্যনালীতে কিছু আটকে থাকলে শিশু ঢোঁক গিলতে পারে না। অবিরত লালা ঝরে, বমি হয় অথবা শিশু খাবার খেতে চায় না।
* অনেক সময় কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বেরতে পারে। বস্তুটি পাকস্থলীতে আটকালে পেটব্যথা এবং রক্ত মেশানো মল হতে পারে।
* বস্তুটি অনেক দিন আটকে থাকলে জ্বর হতে পারে এবং ওজন কমে যেতে পারে।

প্রাথমিকভাবে কী করবেন
* শিশু কিছু গিলে ফেললে মাথা ঠান্ডা রাখুন। ভয়ের কিছু নেই, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
* শিশুর শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, কাশি, বমি ইত্যাদি লক্ষণ খেয়াল করুন।
* বাড়িতে নিজে কিছু করতে যাবেন না। যেমন শিশুকে বমি করানোর চেষ্টা ইত্যাদি কোনও কিছু করাবেন না।
* দ্রুত এক্স-রে করান। কয়েন বা বস্তু কোথায় আটকে আছে তা জানা জরুরি।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছু খাওয়াবেন না বা অপেক্ষা করবেন না।
সবশেষে মনে রাখবেন, সহজে গিলে ফেলতে পারে, এমন খেলনা বা ছোট জিনিস যেন শিশুদের হাতে না যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। যে সব বস্তু গিলে ফেলতে পারে, এমন কিছু শিশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
