আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাশিশ মিত্তল একজন প্রাক্তন আইএএস অফিসার। আইআইটি দিল্লির মেধাবী ছাত্র তিনি। জানা গিয়েছে, তিনি একই সঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী। সম্প্রতি তাঁর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেখানে তাঁকে নুসরাত ফতেহ আলি খানের বিখ্যাত কাওয়ালি 'উনকে আন্দাজ-এ-করম' গাইতে দেখা যাচ্ছে। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ, আবেগময় পরিবেশনা এবং নিখুঁত স্বরনির্বাচন শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। অনেকেই বলছেন, এমন গভীর সঙ্গীত অনুধাবন একজন প্রশাসকের কাছ থেকে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কাশিশ মিত্তল সেই ধারা ভেঙে অনন্য নজির।

সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশিশ মিত্তলের জন্ম পাঞ্জাবের জলন্ধরে ১৯৮৯ সালে। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন। আইআইটি জেইই পরীক্ষায় তাঁর অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক ছিল ৬। পরে তিনি আইআইটি দিল্লি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বি.টেক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস-এ প্রথম চেষ্টাতেই উত্তীর্ণ হন। তাঁর অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক ৫৮।

খবর অনুযায়ী, পড়াশোনা আর প্রশাসনিক দায়িত্বের মাঝেও সঙ্গীত ছিল তাঁর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতচর্চায় আগ্রহ ছিল তাঁর। সেই আগ্রহকে তিনি ধরে রেখেছেন দীর্ঘদিন যাব। তিনি 'আগ্রা ঘরানার' একজন প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে পরিচিত। অল ইন্ডিয়া রেডিও ও দূরদর্শনের তরফে তাঁকে 'এ গ্রেড' দেয়া হয়েছে।সংগীতজগতের এক সম্মানজনক স্বীকৃতি।

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করার সময় কাশিশ লেখেন,'প্রেমে পড়ার পর যখন তোমার কাছে কিছুই থাকে না।' লাইনটি তাঁর গান ও আবেগের গভীরতা আরও ফুটিয়ে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ মজা করে তাঁকে ব্যাঙ্গ করে নানা মন্তব্য করেছে। আবার কেউ কেউ লিখেছেন, 'স্যার, আপনার হৃদয় কে ভেঙেছে?' আবার কেউ কেউ শুধু প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। 'কি সুর, কি কণ্ঠস্বর, কি টোনাল কোয়ালিটি', 'এটাই প্রকৃত শান্তি', 'এই গানটার পুরো ভার্সন শুনতে চাই'।

কাশিশ মিত্তলের পিতা জগদীশ কুমার একজন আইপিএস অফিসার ছিলেন। বাবার অনুপ্রেরণায় তিনিও প্রশাসনে যোগ দেন। তিনি চণ্ডীগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ADC) এবং অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং জেলার জেলা শাসক (DC) হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নীতি আয়োগে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (Additional Principal Secretary) হিসেবে দায়িত্ব।

৯ বছরের প্রশাসনিক জীবনের পর কাশিশ মিত্তল সিদ্ধান্ত নেন নিজের আসল ভালোবাসা, সঙ্গীতে পুরোপুরি সময় দেওয়ার। এই সিদ্ধান্ত শুধু সাহসিকতার পরিচয় নয়, বরং প্রমাণ করে তিনি নিজের অন্তরকে গুরুত্ব দেন।

সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সঙ্গীতের জগতেও কাশিশের অবদান কম নয়। ২০০৭ সালে তিনি পান পাঞ্জাব স্টেট অ্যাওয়ার্ড ফর আর্ট অ্যান্ড কালচার। ২০১০ সালে আইআইটি দিল্লি তাঁকে প্রদান করে সরস্বতী সম্মান, এবং ২০১৮ সালে তাঁকে 'নাদ শ্রী সম্মান' এ হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে অবদানের জন্য ভূষিত করা হয়।

ছাত্রজীবনে তিনি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সিসিআরটি (Centre for Cultural Resources and Training) স্কলারশিপ, এনটিএসই (National Talent Search Examination) স্কলারশিপ এবং সিবিএসই লাভ করেন। এটি তাঁর সঙ্গীত ও শিক্ষা দুই ক্ষেত্রেই উন্নতির পথ খুলে দেয়।

কাশিশ মিত্তলের জীবনের গল্প একটি বিরল সংমিশ্রণ। একইসঙ্গে মেধা, কর্তব্যবোধ, আবেগ এবং শিল্পসাধনার এক অনন্য মেলবন্ধন রয়েছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রশাসক হয়েও একজন মানুষ শিল্পের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেন এবং তা দিয়ে অন্যের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেন। এক সফল আইএএস অফিসার থেকে এক সঙ্গীতজ্ঞ হয়ে ওঠার এই যাত্রা সমাজের কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ জোর করে গাড়িতে তুলে প্রথমে নির্জন জায়গায় নিয়ে গেল, এরপর চলল লাগাতার ধর্ষণ, হকি কোচের বিরুদ্ধে তরুণী যা