আজকাল ওয়েবডেস্ক: সমাজমাধ্যমে মনের খোরাকের কোনও অভাব নেই। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি তালিকা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল সেই তালিকায় পুরুষদের এমন ১৫টি শখের কথা বলা হয়েছে যা মহিলারা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন। কমিক বই সংগ্রহ, কসপ্লে (কোনও ব্যক্তির বা চরিত্র অনুকরণে পোশাক পরা), বিতর্ক এবং ভিডিও গেমিং-এর মতো বিভিন্ন শখের উল্লেখ রয়েছে এই তালিকায়। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন যে, আজকের সমাজ পুরুষদের কোন কোন হবিকে নেতিবাচক মনে করে?
 
 সমালোচকদের মতে, এই বিতর্কিত এই তালিকাটি অন্যায্যভাবে সেই সব শখগুলিকে ছোট করছে, যা মানুষ একা একাই উপভোগ করতে পারে। বা নিজে থেকেই মানুষকে আনন্দ দেয়। অন্যদিকে, উল্টো দিকের একটি অংশের যুক্তি হল, এই তালিকাটি দেখায় অবসরযাপনের সময় পুরুষদের মধ্যে আবেগের গভীরতা, সামাজিকতা এবং রোজকার কাজের কোনগুলি মহিলারা পছন্দ করেন। সহজ ভাষায় কোনও পুরুষ কীভাবে অবসর সময় কাটান সেটিও ডেটিং জীবনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
 
 
 আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় মরেননি, জেতেন ৫ কোটির লটারি! সাতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরা বিশ্বের সবচেয়ে ‘লাকি’ ব্যক্তি ইনি
 
 
 শখের সঙ্গে সম্পর্কের দ্বন্দ্ব
 
 শখ মানুষের ব্যক্তিত্বের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু সেই শখই যদি হয়ে ওঠে সম্পর্কের পথে বাধা? নেট দুনিয়ায় এমনই এক বিতর্ক উস্কে দিয়েছে এই ভাইরাল তালিকা। পুরুষদের কোন ১৫টি শখ মহিলাদের কাছে সবচেয়ে অপছন্দের, তা নিয়ে তৈরি এই তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় মতবিরোধের ঝড় তুলেছে। কমিক বই, ভিডিও গেম থেকে শুরু করে অ্যানিমে দেখা বা বিতর্ক করা এই ধরনের শখগুলিকে ‘অনাকর্ষণীয়’ বলে দাগিয়ে দেওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। কিন্তু এই বিতর্কের আড়ালে কি লুকিয়ে রয়েছে বৃহত্তর কোনো সামাজিক সত্য?
 
 তালিকার পেছনের যুক্তি
 
 যেসব শখ এই তালিকায় স্থান পেয়েছে, সেগুলির মধ্যে একটি সাধারণ জিনিস লক্ষ্য করা যায়। এগুলির বেশিরভাগই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। সমালোচকদের মতে, এই তালিকাটি একবিংশ শতাব্দীতেও পুরোনো ধ্যানধারণাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। তাঁদের মতে, কোনও মানুষের শখ তাঁর ব্যক্তিগত আনন্দের উৎস, যা অন্যের পছন্দ-অপছন্দের মাপকাঠিতে বিচার করা অনুচিত। ভিডিও গেমিং বা কমিক বই সংগ্রহ এখন আর কেবল ‘ছেলেমানুষির’ বিষয় নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগ ও পেশার সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। এই ধরনের শখকে উপহাস করা আসলে এক ধরনের মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দকে অসম্মান করে।
 
  বিতর্কের অন্য পিঠ
বিতর্কের অন্য পিঠ
 
 তবে মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। অনেক সমাজতত্ত্ববিদ এবং সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তালিকার মাধ্যমে মহিলারা সরাসরি শখটিকে অপছন্দ করছেন না, বরং সেই শখের সঙ্গে জড়িত জীবনযাত্রার ধরন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে, মূল সমস্যাটি হল ভারসাম্য। যেমন, একজন পুরুষ যদি প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিও গেমে বুঁদ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি হয়তো তাঁর সঙ্গীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন না। এর ফলে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
 
 একইভাবে, যে শখগুলির কোনও কোনওটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ, সেগুলিও অনেক সময় বাস্তব জীবনে দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। মহিলাদের ক্রমবর্ধমান পছন্দের তালিকায় এমন পুরুষরা জায়গা পাচ্ছেন, যাঁরা পরিণতমনষ্ক এবং নিজের শখের পাশাপাশি সম্পর্ক ও বাইরের জগতের সঙ্গেও ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। এটি কোনও শখকে ছোট করা নয়, বরং একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতি আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
 
 ভারতীয় প্রেক্ষাপট
 
 ভারতীয় সমাজেও এই বিতর্কের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। এখানে এখনও বহু ক্ষেত্রে আশা করা হয় যে পুরুষরা এমন শখ বা পেশায় যুক্ত থাকবেন যা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং গুরুগম্ভীর। যদিও নতুন প্রজন্ম এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছে, তবুও ডেটিং অ্যাপ বা বিবাহ সংক্রান্ত আলোচনায় শখ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
 
 শেষ পর্যন্ত, এই ভাইরাল তালিকাটি একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর সমাধান লুকিয়ে আছে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধার মধ্যে। কোনও মানুষের শখ যদি তাঁর বা তাঁর সঙ্গীর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে এবং সম্পর্কের ভারসাম্যে আঘাত না হানে, তবে সেই শখকে ‘আকর্ষণীয়’ বা ‘অনাকর্ষণীয়’ তকমা দেওয়া অর্থহীন। আসল কথা হল, সঙ্গী আপনার শখকে কতটা সম্মান করছেন এবং আপনারা দুজনে একসঙ্গে জীবনকে কতটা উপভোগ করতে পারছেন।
