আজকাল ওয়েবডেস্ক: উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগে সোমবার সন্ধ্যায় দেশের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাঁর এই অনভিপ্রেত সিদ্ধান্তে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-ও (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) বিস্মিত। কারণ লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ভোটগ্রহণকারী পরিষদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সূত্রের খবর, এনডিএ জোট আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন উপ-রাষ্ট্রপতির জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। জানা যাচ্ছে, ধনখড়ের মতোই কোনও বর্তমান রাজ্যপাল, অথবা সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতা বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাউকে উপ—রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিজেপির হাতে বিকল্পের অভাব নেই।
উল্লেখ্য, ধনখড় উপ-রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। ২০১৭ সালে বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন ভেঙ্কাইয়া নাইডু-কে উপ-রাষ্ট্রপতির পদে বসানো হয়েছিল। ধনখড় ছিলেন তাঁর উত্তরসূরি। ধনখড়ের অবসরের পর এক শীর্ষ বিজেপি নেতা বলেন, ‘আমরা এখনও গোটা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। তবে আমি বিশ্বাস করি দল এমন কাউকে বেছে নেবে যিনি অভিজ্ঞ এবং গ্রহণযোগ্য’। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যসভার উপ-সভাপতি হরিবংশ নারায়ণ সিংহের নামও আলোচনায় উঠে আসছে। জেডিইউ (জনতা দল ইউনাইটেড)-এর সাংসদ হরিবংশ ২০২০ সাল থেকে রাজ্যসভার উপ-সভাপতি পদে রয়েছেন এবং সরকারের পূর্ণ আস্থাভাজন বলেই পরিচিত। পরবর্তী উপ-রাষ্ট্রপতি কে হবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে হঠাৎই ইস্তফার কথা জানান জগদীপ ধনখড়। পদত্যাগের কারণ হিসেবে নিজের স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। চিঠিতে লিখেছেন, পরামর্শ মেনে নিজের স্বাস্থ্যে নজর দেওয়ার জন্যই উপরাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দিয়েছেন। দায়িত্বে থাকাকালীন কীভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সমর্থন পেয়েছেন, সে কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যে আন্তরিকতা পেয়েছি, যেভাবে আমার উপর আস্থা রাখা হয়েছে, তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’ রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে ধনখড় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যের কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শেই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ধনখড়।
তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়াদকালে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা, সমর্থনের এবং দায়িত্বপালন করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন। ৭৪ বছর বয়সি ধনখড় আরও জানান, উপরাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি ভারতের অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছেন। এই উন্নয়নে যোগদান করতে পেরে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন বলে জানিয়েছেন ধনখড়। ২০২২ সালে আগস্ট মাসে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন জগদীপ ধনখড়। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে ৩৪৬ ভোটে হারিয়ে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। সোমবারও রাজ্যসভায় অধ্যক্ষ হিসাবে অধিবেশন পরিচালনা করেন ধনখড়।
১৯৫১ সালের ১৮ মে রাজস্থানের ঝুনঝুনুতে জন্ম ধনখড়ের। ছিলেন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মাত্র ৩৪৬ ভোটে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে তিনি পরাজিত করেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। গত মার্চ মাসে ৭৩ বছরের ধনখড়কে বুকে ব্যথা নিয়ে দিল্লির এইমসে ভর্তি করানো হয়। শুধু তাই নয়, গত মাসে কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আচমকা অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে সোমবার সকালে সংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে রাজ্যসভার অধ্যক্ষের আসনে বসে কাজ করেছেন ধনখড়। কিন্তু রাতেই আচমকা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
