আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানসিক চাপকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু জানেন কি এই মানসিক চাপ শুধুমাত্র নিজের উপর নয়, প্রভাব ফেলতে পারে আপনার সন্তানের উপরেও। এটি নিছক আচরণ বা শিক্ষা থেকে হয় না, সরাসরি জৈবিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে এই সমস্যা। ২০১৬ সালে ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে থাকা পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাণুর মধ্যে থাকা বিশেষ মলিকিউল বা অণুর মাধ্যমে তাদের সন্তানদের মধ্যেও মানসিক চাপ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য সঞ্চারিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই প্রক্রিয়ায় তাদের ডিএনএ-র গঠনে কোনও বদল ঘটেনি।
 
 আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
 
 গবেষণা বলছে, মানসিক চাপ জিনের গঠন পাল্টে দেওয়ার পরিবর্তে শুক্রাণুতে থাকা ক্ষুদ্র ‘নন-কোডিং আরএনএ’-র মাত্রা পরিবর্তন করে দেয়। এই আরএনএ অণুগুলিই নিষিক্ত হওয়ার পর ভ্রূণের প্রাথমিক বিকাশ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলেই সন্তানদের মধ্যে মানসিক চাপের প্রভাব সঞ্চারিত হয়।
 
 কীভাবে এই চাপ সঞ্চারিত হয়?
 
 আরও পড়ুন: লাবুবু ঘিরে বাড়ছে আতঙ্ক! পুতুল, নাকি শয়তানের দূত? ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় সন্ত্রস্ত বলি নায়িকাও
 
 আণবিক বার্তাবাহক: মানসিক চাপে থাকা পুরুষ ইঁদুরদের শুক্রাণুতে নির্দিষ্ট নয়টি মাইক্রো-আরএনএ-র মাত্রা বেশি থাকে। এই অণুগুলি একপ্রকার সংকেত হিসাবে কাজ করে, যা নিষিক্ত হওয়ার পর জিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
 
 আচরণগত পরিবর্তন: বিজ্ঞানীরা যখন এই নির্দিষ্ট আরএনএগুলিকে সুস্থ ইঁদুরের ভ্রূণে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করান, তখন দেখা যায় যে, জন্ম নেওয়া সন্তানদের মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা বদলে গিয়েছে। তারা চাপের প্রতি অনেক কম সংবেদনশীল ছিল এবং তাদের মধ্যে উদ্বেগজনিত আচরণেও ফারাক রয়েছে।
 
 মস্তিষ্কের বিকাশ: ওই সন্তানদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে জিনের কার্যকারিতায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। মস্তিষ্কের এই অংশটিই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। মস্তিষ্কের গঠন এবং ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত জিনেও এই বদল ধরা পড়ে।
 
 প্রাথমিক প্রভাব: শুক্রাণুর মধ্যে থাকা এই পরিবর্তিত আরএনএ নিষিক্ত হওয়ার পরেই দ্রুত কাজ শুরু করে। এটি মাতৃ-আরএনএ-কে নষ্ট করে দেয় এবং মস্তিষ্কের বিকাশে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন ঘটায়।
 
 এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, ডিএনএ-র পরিবর্তন ছাড়াই বাবার অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক চাপ শরীরে এক ধরনের ‘জৈবিক ছাপ’ রেখে যায়, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে উত্তরাধিকার সূত্রে শুধু জিনই মেলে না, শরীর তার নিজের অভিজ্ঞতাও পরবর্তী প্রজন্মে বয়ে নিয়ে চলে।
