আজকাল ওয়েবডেস্ক: আপনি যদি মনে করেন যে ওয়ান্ডার ওমেনের 'থেমিসকিরা' শুধু কল্পনার জগতে সীমাবদ্ধ, তাহলে আপনার ধারণা ভুল! কারণ বাস্তবেও গড়ে উঠেছে এক অনন্য নারীবিশ্ব—‘সুপারশি আইল্যান্ড’। ফিনল্যান্ডের শান্ত জলরাশির বুকে অবস্থিত এই দ্বীপে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। এটি একমাত্র নারীদের জন্য তৈরি একটি নির্জন, বিলাসবহুল, নিরাপদ ও স্বনির্ভর জীবনযাপনের স্থান। এই ব্যতিক্রমী দ্বীপটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন জার্মান বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা রথ। যিনি একসময় কেবল দুটি স্যুটকেস আর একটি ল্যাপটপ নিয়ে নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন। সেই ল্যাপটপ এবং নিজের দক্ষতাকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন একটি সফল আইটি পরামর্শ সংস্থা Matisia Consultants, যা পরবর্তী সময়ে বছরে ৬৫ মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব অর্জন করে। এরপর সেই ব্যবসা বিক্রি করে শুরু করেন নতুন এক স্বপ্ন—একটি নারীবান্ধব দ্বীপ, যেখানে নারীরা নিরাপদে, স্বাধীনভাবে ও পরিপূর্ণ আত্মসম্মানে জীবন কাটাতে পারে।

ফিনল্যান্ডের রায়াসেপোরির উপকূলের কাছে বাল্টিক সাগরের বুকে এই দ্বীপটি বিস্তৃত ৮.৪ একর অঞ্চলে। সুপারশি আইল্যান্ডের বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র তার ‘পুরুষ নিষিদ্ধ’ নীতিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মহিলাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এক আদর্শ ‘হোলিস্টিক ওয়েলনেস রিট্রিট’ হিসেবে। দ্বীপে রয়েছে অত্যাধুনিক চারটি কটেজ, যা একসঙ্গে দশজন মহিলা অতিথিকে আরামদায়ক আবাসন প্রদান করে। প্রতিটি কটেজে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, এবং সাজসজ্জা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। প্রতিটি দিন শুরু হয় সমুদ্রতীরে যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে। এরপর অতিথিরা অংশ নিতে পারেন ধ্যান, হাইকিং, ফিটনেস সেশন, রান্নার ওয়ার্কশপ, স্কিন কেয়ার, আর্ট থেরাপি ইত্যাদি কার্যক্রমে।

আরও পড়ুন: জুন মাসে ১৮৫টি ওষুধের ব্যাচ মানহীন: সিডিএসসিও ও রাজ্য পর্যায়ের নজরদারিতে গুরুতর ত্রুটি উদ্ঘাটিত

খাদ্যতালিকায় থাকে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত উপকরণে প্রস্তুত স্বাস্থ্যকর খাবার—একটি সম্পূর্ণ ফার্ম-টু-টেবিল অভিজ্ঞতা। নিরামিষ, নিরলস, ভেগান—যে যেই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুক না কেন, দ্বীপের রাঁধুনিরা সেই অনুযায়ী মেনু প্রস্তুত করেন। অতিথিরা সমুদ্রের ধারে একে অপরের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন, গল্প বলেন, একে অপরকে অনুপ্রাণিত করেন। এই দ্বীপ কেবল বিশ্রামের জায়গা নয়, বরং নারীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সংযোগ গড়ে তোলার এক পরিপূর্ণ ক্ষেত্র। দ্বীপজুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে যোগ দেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নারী নেতৃত্বরা।

ক্রিস্টিনা রথ বলেন, “আমি কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্রী ছিলাম, আর কাজ করেছি সম্পূর্ণ পুরুষ-প্রধান পরিবেশে। কতবার শুনতে হয়েছে—‘এই ব্লন্ডি এখানে কী করছে?’ সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি বুঝেছি, নারীদের একটি নিজেদের মতো করে গড়া জায়গা দরকার—সেই চাহিদা থেকেই সুপারশি আইল্যান্ড।” তিনি আরও বলেন, “এই দ্বীপের মাঝখানে ব্লুবেরি ফলের ক্ষেত আছে। গ্রীষ্মকালে হাঁটতে বেরোলে মনে হয় ব্লুবেরি ফিল্ডস ফরএভার...এ যেন প্রকৃতির কোলে তৈরি এক নারীবান্ধব ইউটোপিয়া।”

আজকের দিনে, যখন নারী স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন সুপারশি আইল্যান্ড এক অনন্য দৃষ্টান্ত—নারীদের জন্য নারীদের দ্বারা তৈরি এক নিরাপদ, শক্তিশালী, ও উন্নয়নমুখী পরিসর। সত্যিই, সুপারশি আইল্যান্ড যেন একটি জীবন্ত কল্পকথা, যেখানে নারীরা একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যান—শক্তি, সাহস, ও সংহতির গল্প লিখতে।