আজকাল ওয়েবডেস্কঃ অফিসে ঢুকে সেই যে চেয়ারে বসেছেন, লাঞ্চ ব্রেকের আগে ওঠার সুযোগই পাননি। নয়-দশ ঘণ্টার অফিসে টয়লেট, টিফিন খাওয়া নিয়ে হাতে গুনে মাত্র কয়েক মিনিট চেয়ার ছাড়ার সময় পান। এভাবেই কর্মব্যস্ততায় কেটে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এদিকে একনাগাড়ে বসে থাকায় ক্রমশ বাড়ছে পিঠ-কাঁধের ব্যথা। ক্লান্ত শরীরে রাতে শুয়েও স্বস্তি নেই, ছটফট করতে থাকেন যন্ত্রণায়। আগে বয়স হলেই এই সমস্যা দেখা দিত। কিন্তু এখন আধুনিক জীবনের জীবনযাপন, খাদ্যাভাস, অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সহ নানা কারণে ত্রিশ পেরতে না পেরতেই শরীরের একাধিক ব্যথা-বেদনা হানা দেয়। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যথা-যন্ত্রণা বড় কোনও বিপদও ডেকে আনতে পারে। অনেকেরই এই ব্যথা ক্রনিক আকার নেয়। যার জন্য ওষুধ খেতেও বাধ্য হন। কিন্তু তাতেও অনেক সময়ে লাভ হয় না। ইদানীং এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অনেকে বালিশ ছাড়া ঘুমোন। কিন্তু সত্যি কি বালিশ ছাড়া ঘুমোলে পিঠ-কাঁধ-এর ব্যথা কমে? আসুন জেনে নেওয়া যাক গবেষণা কী বলছে- 

 

আরও পড়ুনঃ মাত্র ১৫ দিনে শরীরে বন্ধ হবে ইউরিক অ্যাসিডের তাণ্ডব! রোজ সকালে এই পানীয়ই হাড় থেকে নিংড়ে নেবে ব্যথা

ঘুম নিয়ে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কয়েকজনের বালিশ ছাড়া ঘুমোলে লাভ হয়। তবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির শরীরের গঠন, ঘুমের অভ্যাসের উপর এবং ব্যথার কারণের উপর। কিছু ক্ষেত্রে, বালিশ ছাড়া ঘুমোলে মেরুদণ্ড স্বাভাবিক সারিবদ্ধতায় থাকে, যা পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যারা পেটের উপর ভর দিয়ে ঘুমোন, তাঁদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে। গবেষণা এও বলছে, বালিশ ছাড়া ঘুমালে মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে এবং ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমে। এটি রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে পারে। বালিশ ছাড়া ঘুমোলে কাঁধ, ঘাড় বা পিঠের ব্যথার সঙ্গে মানসিক চাপ কমে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। 

সবার জন্য বালিশ ছাড়া ঘুমানো ঠিক নাও হতে পারে। দীর্ঘ দিন বালিশ ছাড়া ঘুমোলে কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুলে এপাশ-ওপাশ ফিরতে ঘাড়ে ব্যথা হতে থাকে। এছাড়াও অনেক সময়ে শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। অনেকেরই বালিশ ছাড়া ঘুমোকে দম আটকে আসে। এমনকী রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যাতেও ভোগেন অনেকে। 


বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বালিশ ছাড়া না ঘুমিয়ে পিঠ-কাঁধে ব্যথা কমাতে নিয়মিত কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন। তাহলেই সহজে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন-  

* যতই ব্যস্ততা থাকুক, শরীরচর্চায় অবহেলা করবেন না। পিঠ-কোমর-কাঁধের যন্ত্রণায় কয়েকটি যোগাসন, স্ট্রেচ করলে সবচেয়ে বেশি আরাম পাওয়া যায়। 

* রোজ অন্তত এক ঘণ্টা অন্তর ৫ মিনিট হাঁটাচলা করতে হবে। শুধু ব্যথা নয়, এতে চোখ এবং মাথারও বিশ্রাম হবে। আর যদি একান্তই কাজ ছেড়ে হাঁটতে না পারেন, তাহলে বসে বসেই স্ট্রেচিং করুন। এতেও খানিকটা স্বস্তি পাবেন। 

* একটানা অফিসে এক জায়গায় বসে কাজ করলে পিঠ, কোমরের যন্ত্রণা হওয়া স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে বসার ভঙ্গি ঠিক রাখতে হবে। কাজ ছাড়াও অন্য সময়ে কিংবা ঘুমানোর সময়েও সঠিক বসা ও শোওয়ার অভ্যাস করতে হবে। অনেক সময় শোয়ার ভুলেও কোমরে চাপ পড়ে। টেবিল-চেয়ারে কাজ করার সময়ও মেরুদণ্ড সোজা রাখা জরুরি।

* গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথার সঙ্গে মানসিক চাপ বা অবসাদের একটা যোগ রয়েছে। তাই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মন ভাল রাখা জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন। 

* ঘুমের সঙ্গেও পিঠ-কোমর যন্ত্রণার যোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কম ঘুম হলে কোমরের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। সারাদিন নানা কাজের পর শরীরের বিভিন্ন পেশি, স্নায়ু ঘুমোনের সময় শিথিল হয়ে পড়ে। তাই ব্যথামুক্ত শরীরের জন্য রোজ ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।