বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

উত্তর সম্পাদকীয় | ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও ভারতে আসতে মরিয়া অ্যাপেল, নেপথ্যে রয়েছে যথেষ্ট কারণ

AD | ২৮ মে ২০২৫ ১৩ : ৪৫Abhijit Das


বুড়োশিব দাশগুপ্ত

প্রথমে শান্তভাবে, তারপরেই হুমকি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাপলের সিইও টিম কুক-কে বলেছেন ভারতে বিনিয়োগ না করতে। কারণ, ট্রাম্পের দাবি, ‘ভারত নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারবে’। আরও উপদেশ দিয়েছেন, আমেরিকার মাটিতেই আইফোন তৈরি করতে। যখন তাতে কাজ হল না এবং কুক ভারতকে আশ্বস্ত করলেন যে বিনিয়োগের কথা রাখবে অ্যাপল। তারপরেই অন্য পথ বেছে নিলেন ট্রাম্প। হুমকি দিলেন, যদি অ্যাপল ভারতে বিনিয়োগ করে তাহলে মার্কিন প্রশাসন প্রতিটি আইফোনে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর চাপাবে।

আমাদের সকলেরই হয়তো মনে আছে ২০২৩ সালে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, যৌথভাবে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ সচল রাখা এবং নতুন উদ্ভাবনীতে উৎসাহ জোগানো। মৌ-টি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বাণিজ্যিক সুযোগ, গবেষণা, প্রতিভা এবং দক্ষতার উন্নয়নকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে। মার্কিন আইটি সংস্থা মাইক্রোন টেকনোলজি ভারত সরকারের সহায়তায় ভারতে একটি নতুন সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি এবং গবেষণাগার তৈরিতে ৮২৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মোট বিনিয়োগের মূল্য ছিল ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার। ভারতে অ্যাপলের প্রবেশ ছিল এই মার্কিন-ভারত সমন্বিত বৈশ্বিক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ। যার লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে আস্থা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটি নতুন স্তর গড়ে তোলা। নতুন রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প রাজনৈতিকভাবে পূর্ববর্তী ডেমোক্র্যাটিক সরকারের গৃহীত এই ধরনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে। এর আগে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট ছিলেন যখন এলন মাস্ক তাঁর ভাল বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ভারতে টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। মাস্কের প্রচেষ্টাও বাইডেন-মোদী চুক্তির মাধ্যমে তৈরি আমেরিকা-ভারত নতুন এবং উদীয়মান পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি অ্যাকশন প্ল্যাটফর্মের একটি অংশ ছিল।

ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কিন কর্পোরেট জায়ান্টরা সাধারণত সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজস্ব বাণিজ্য নীতি মেনে চলে। ট্রাম্প একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ না হয়ে বরং একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এবং তাও দ্বিতীয়বারের মতো- তিনি তাঁর নিজের ব্যবসায়ীর সহজাত প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে, ইলন মাস্ক, যিনি রাষ্ট্রপতি পদের লড়াইয়ে ট্রাম্পের পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি তাঁর ব্যবসায়িক যুক্তি অনুসরণ করেন, বন্ধুর 'না' কথাটি উপেক্ষা করেন এবং তাঁর বৈদ্যুতিক টেসলা গাড়ি তৈরির জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। এবং টিম কুকও সম্ভবত একই কাজ করবেন- কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ভারতে আইফোন তৈরি করা ব্যবসায়িকভাবে যুক্তিসঙ্গত।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক হাজার মার্কিন ডলারের আইফোনে অ্যাপল ৪৫০ ডলার লাভ করে। ফোনটি তৈরির কাজ অনেক দেশেই হয়- তাইওয়ান চিপ তৈরি করে (১৫০ ডলার), দক্ষিণ কোরিয়াও এলইডি স্ক্রিন তৈরি করে (৯০ ডলার), জাপান ক্যামেরা সরবরাহ করে (৮৫ ডলার)। আমেরিকা, জার্মানি, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়ায় তৈরি অ্যাপলের অন্যান্য কিছু যন্ত্রাংশে অতিরিক্ত ১২৫ ডলার খরচ হয়।

আগেকার অ্যাপল ফোনগুলো চীনে অ্যাসেম্বল করা হত। এখন এটি ভারতে স্থানান্তরিত হবে। এটি ‘চীন+১’ নামে একটি বিশ্বব্যাপী কৌশল যা বেশিরভাগ আমেরিকান এবং ইউরোপীয় কর্পোরেটরা চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি এবং ব্যবসায় অত্যধিক হস্তক্ষেপের কারণে সেই দেশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য গ্রহণ করেছে। এই চীন+১ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হল ভারত এবং এই সুবিধাটি লুট করার জন্য ভারত সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতে এই অ্যাসেম্বলি অপারেশন (পূর্বে চীনে করা হয়েছিল) আইফোনের প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ৩০ ডলার। যা ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী আমেরিকায় করা হলে, সিলিকন ভ্যালিতে উচ্চ শ্রম খরচের কারণে ৩৯০ ডলার পড়বে। যদি ভারতে ৩০ ডলার অ্যাসেম্বলি খরচের সঙ্গে ২৫ শতাংশ ট্রাম্প কর যোগ করা হয়, তাহলে তা ৩৭.৫ ডলার হবে। তবুও সেই আইফোনের দাম আমেরিকায় তৈরি এবং অ্যাসেম্বল আইফোনের চেয়ে দশ গুণ কম হবে।

অ্যাপলের চুক্তিভিত্তিক প্রস্তুতকারক ফক্সকন ইতিমধ্যেই বেঙ্গালুরুর কাছে তাদের নতুন অ্যাসেম্বলি কারখানা তৈরি করতে ২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি এক লক্ষ আইফোন অ্যাসেম্বল করবে। ফক্সকন অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কারণ প্রথমটি ছিল ২০২৩ সালে মার্কিন-ভারত উদ্যোগ ‘অন ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি’ (iCET)। যেখানে বিনিয়োগকারী মার্কিন সংস্থাগুলিকে আকর্ষণীয় আর্থিক সুবিধা দেবে ভারত। ফক্সকনের ভারতে আসার দ্বিতীয় কারণ, বিশ্বব্যাপী 'চীন+১' উদ্যোগ।

তাই ট্রাম্পের হাজারও হুমকি সত্ত্বেও প্রাথমিকভাবে ফোন তৈরির জন্য অ্যাপলের ভারতে আসার যথেষ্ট কারণ আছে।


Donald TrumpUSAIndiaChinaTim CookApple

নানান খবর

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া