আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যশস্বী জয়সওয়াল দাপট দেখাচ্ছেন। স্যর ডনের দেশে প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। ছক্কা হাঁকিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছন। যে যশস্বী পারথের পিচের সঙ্গে সন্ধি করতে না পেরে প্রথম ইনিংসে খাতা না খুলেই আউট হন, সেই তিনিই দ্বিতীয় ইনিংসে ফুল ফোটাচ্ছেন। লম্বা ইনিংস খেলছেন। তাঁর ব্যাট টানছে ভারতীয় দলকে।
অনেকেই যশস্বী আবেগে ভেসে যাচ্ছেন। ২২ বছরের তরুণ ব্যাটারের জয়ধ্বনি করছেন। আসলে পারথে এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে থানে স্টেডিয়ামে নিরলস পরিশ্রমের আখ্যান। অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার আগে খুব অল্প সময় হাতে পেয়েছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ড সিরিজে ঘূর্ণি পিচ ব্যহৃত হয়েছিল। সেই পিচে খেলা আর অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি পিচে ব্যাট করা এক ব্যাপার নয়। দুই পিচের চরিত্র ভিন্ন। ঘূর্ণি পিচ থেকে বাউন্স ভরা পিচে খেলার কৌশলে শান দেন যশস্বী।
হাতে অল্প সময় পেয়েছিলেন। সেই স্বল্প সময়ে নিজেকে প্রস্তুত করেন অস্ট্রেলিয়ার জন্য। ২০১১ সালের ইংল্যান্ডের সফরের আগে রাহুল দ্রাবিড় ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে তৈরি করেছিলেন। শিবরামকৃষ্ণণকে নাগারে খেলে ওয়ার্ন-বধের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন শচীন তেণ্ডুলকর। ৯২ সালে বিশ্বজয়ী পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে ভেজা ক্যাম্বিস বলে প্র্যাকটিস করেছিল বলেও লোকগাথা রয়েছে। ঠিক তেমনই যশস্বী অস্ট্রেলিয়ার বিমানে ওঠার আগে থানে স্টেডিয়ামে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুশীলন করেছেন জয়সওয়াল।
২০০ ওভার ব্যাট করে নিজেকে তৈরি করেছেন। কংক্রিটের স্ল্যাব ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসিয়ে বল ছোড়া হয়েছে। ধেয়ে আসা বলে ব্যাটিং অনুশীলন করে গিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার পিচে বাউন্স রয়েছে। সেই বাউন্সের সঙ্গে যাতে সহজে 'অ্যাডজাস্ট' করা যায়, তার জন্যই এই নিবিড় অনুশীলন। কমলা এবং হলুদ বলে থ্রো ডাউন অনুশীলন নিতেন যশস্বী। তাঁর পাঁজর লক্ষ্য করে বল ছুড়ে দেওয়া হত। অফ স্টাম্পের বাইরে ১৪৫ কিমি বেগে ছুড়ে দেওয়া হত বল। যে বল ব্যবহার করা হত, তা অপেক্ষাকৃত হালকা ছিল। দ্রুতই তা পৌঁছে যেত যশস্বীর কাছে। কংক্রিটের স্ল্যাব এমনভাবে বসানো থাকত যাতে বল তার উপরে পড়ে ভাল বাউন্স নেয়। অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার দু'দিন আগেও ২০০ ওভার ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন যশস্বী।
উদ্দেশ্য ছিল একটাই। একশো ওভার ব্যাট করা। একের পর এক বল ছুড়ে দেওয়া হত তাঁর দিকে। বিরাম ছিল না, ছিল না বিশ্রাম। নাগাড়ে ব্যাট করে গিয়েছেন। অজিদের বিরুদ্ধে খেলার সময়ও তো তিনি বিশ্রাম পাবেন না। ম্যাচের পরিস্থিতি তৈরি করে যশস্বী ব্যাটিং অনুশীলন করে গিয়েছেন।
অতীতে অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে যাওয়ার আগে সিমেন্টের উইকেটে ১৫ গজ দূর থেকে ব্যাটসম্যানদের দিকে বল ছুড়ে দেওয়া হত। কিন্তু ক্রিকেটে এখন পরিবর্তন এসেছে। সেই কারণে কংক্রিটের স্ল্যাবকে অ্যাঙ্গেল করে বসনা হয়, যাতে বল পড়ে স্কিড করে। এমন বাউন্স তৈরি করে যা খেলতে মোটে্ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না ব্যাটাররা। অজিভূমে এই ধরনের বাউন্সের সঙ্গে জুড়েছে গতি। সেই সঙ্গে সুইং বোলিং। কিন্তু যশস্বী যে তৈরি হয়েই এসেছেন। তাই স্টার্ক, হ্যাজলউডরা তাঁকে সমস্যায় ফেলতে পারেননি।
পারথে যশস্বীর সাফল্যের পিছনে রয়েছে পরিশ্রমের এই কাহিনি। থানে স্টেডিয়াম সাক্ষী থেকেছে এক তরুণ ব্যাটারের সাফল্যের বীজ বোনার কাহিনির।
