কৃশানু মজুমদার: তিনি বলতেন ষোলোয় আমার সুখ, ষোলোয় আমার দুঃখ। ১৬ নম্বর জার্সি পরে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আগলাতেন। সেই গুরুবিন্দর সিং এখন পুরোদস্তুর কোচ। 

আগামী মাস থেকেই পথচলা শুরু করবে তাঁর স্বপ্নের অ্যাকাডেমি। কানাডা এখন পাঞ্জাবতনয়ের নতুন ঠিকানা। সেখানকার ক্যালগারিতেই লাল-হলুদ প্রাক্তন খুলেছেন  অ্যাকাডেমি। 

১৬ সংখ্যার  সংখ্যার সঙ্গে জড়িয়ে গুরবিন্দরের জীবন। তাঁর জন্ম তারিখ ১৬ এপ্রিল। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন স্টপারের বাবা প্রয়াত হন ১৬ মার্চ। 

বুট জোড়া তুলে রেখেছেন আগেই। পাঞ্জাবের জলন্ধর ছেড়ে চলে গিয়েছেন কানাডায়। গুরবিন্দর বলছিলেন, ''ছোট ছোট বাচ্চাদের ফুটবলের পাঠ শেখাব। ওই কারণেই আমার অ্যাকাডেমির নাম দিয়েছি গ্রাসরুট সকার অ্যাকাডেমি। গোড়া ঘরই আসল। গোড়া যদি মজবুত হয়, তাহলে আর সমস্যা কী!'' 

গুরবিন্দরের ফুটবল অ্যাকাডেমিতে বিভিন্ন বয়সের খুদে শিক্ষার্থী ফুটবল শিখবে। ৬-৯, ১০-১৩ এবং ১৪-১৬ বছরের মোট ৬০ জন ছেলে-মেয়েদের নিয়েই কাজ করবেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক। তিনি বলছিলেন, ''আপাতত ৬০ জন ছেলেমেয়ে নিয়েই শুরু করছি। আমার সঙ্গে কোচিং করাবে আমার স্ত্রীও। আমার এক বন্ধু অর্শদীপ সিংও রয়েছে এই অ্যাকাডেমিতে।'' অর্শদীপ ওএনজিসি, পাঞ্জাব পুলিশের প্রাক্তন ফুটবলার।  

No photo description available.

গুরবিন্দরের স্ত্রী হরদীপ কৌর ইঞ্জিনিয়ার। কানাডার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে এখন কর্মরত তিনি। হরদীপ ও গুরবিন্দর গত বছর জসমীর সিংয়ের কাছ থেকে ডি লাইসেন্স করেছেন। কিন্তু স্ত্রী কেন কোচিং লাইসেন্স করলেন? 

এখানেই টুইস্ট। ব্যতিক্রমী ভাবনা গুরবিন্দর ও তাঁর তাঁর স্ত্রীর। ইস্টবেঙ্গল, কেরালা ব্লাস্টার্স, নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের হয়ে খেলা অভিজ্ঞ ফুটবলার বলছেন, ''আমার স্ত্রীর ফুটবল সম্পর্কে জ্ঞান বেশ ভাল। কোচিং লাইসেন্স করার সময়ে হরদীপ সব চেয়ে ভাল ডেমো দিয়েছে। ওর কোচিং ডিগ্রি করার পিছনে আরও একটা কারণ রয়েছে। ওদের গ্রামে অনেক মেয়েই ফুটবল খেলে। আমরা দেশে ফিরে গিয়ে যদি কোচিং অ্যাকাডেমি গড়ি, সেখানে মেয়েদের ফুটবল শেখাতে পারবে হরদীপ। মহিলাদের সমস্যা ভাল বুঝতে পারে একজন মহিলাই। সেই কারণেই আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গেই কোচিং ডিগ্রি করেছে।'' 

No photo description available.

পাঞ্জাব ছেড়ে কানাডা চলে আসার আখ্যানও বেশ চমকপ্রদ। গুরবিন্দর বলছিলেন,  ''কোভিড অতিমারীর সময়ে ভয়ঙ্কর ছবি দেখতে হয়েছে আমাকে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা একা হয়ে পড়েছে। আমি তাঁদের গিয়ে সাহায্য করতাম। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তার পরে আমি দু'মাসের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাই। আমার স্ত্রী এসেছিল কানাডায়। ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে এখানকার একটা কোম্পানিতে চাকরিও হয়ে যায়। আমরা স্থির করি কানাডাতেই এবার থেকে থাকব। এখানকার দুটো অ্যাকাডেমিতে আমি আগে ফুটবল শিখিয়েছি।'' 

প্রাক্তন তারকার ফুটবল শেখানোর পদ্ধতি দেখে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরাই পাঞ্জাবতনয়কে নিজের অ্যাকাডেমি খোলার পরামর্শ দেন। 

ক্লাব ফুটবল, জাতীয় দলে খেলার বিশাল অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ গুরবিন্দরকে কষ্ট দেয় তাঁর প্রাক্তন ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের হতশ্রী পারফরম্যান্স। বলছেন, ''আমার রাগ হয় সব দেখে। কেন যে দলটা ভাল করতে পারছে না, সেটাই তো বুঝতে পারি না। দীর্ঘ সময় ধরে খারাপ সময় চলছে।''     


কানাডা এখন বিশ্বকাপে খেলে। ২০২৬ বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক দেশ কানাডাও। নিজের ঘর ছেড়ে, দেশ ছেড়ে সেই দেশের মাটিতেই ফুটবলার তৈরির সাধনায় মেতে উঠেছেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকা। 

একসময়ে ডার্বি ম্যাচে ওডাফা-ব্যারেটোদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন। এখন তিনি পুরোদস্তুর ফুটবল কোচ। খুদে শিক্ষার্থীদের 'গুরু'মন্ত্র দেবেন প্রাক্তন তারকা। তৈরি করবেন ভবিষ্যতের অসংখ্য 'গুরবিন্দর'।