আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোহনবাগানে বহু সভাপতি এসেছে এবং গিয়েছে। কিন্তু এর আগে এত জাঁকজমকভাবে কোনও সভাপতির আগমন দেখা যায়নি। এমনকী টুটু বসুর জমানাতেও না। মোহনবাগানে সভাপতি পদ আলঙ্কারিক। তাঁর বিশেষ ভূমিকা থাকে না। কিন্তু এবার যে পাশা বদলাতে চলেছে, তার আগাম আভাস পাওয়া গেল। দুপুর সাড়ে তিনটে থেকেই ক্লাবের বাইরে জমে ভিড়। ঢাক-ঢোল বাজা শুরু। ভেতরে তখন চলছে মোহনবাগানের নতুন কমিটির প্রথম কার্যকরী বৈঠক। বাইরে নতুন সভাপতিকে স্বাগত জানানোর তোড়জোড় শুরু। বিকেল ৪.৪৫ মিনিট নাগাদ ক্লাব তাঁবুতে প্রবেশ করেন দেবাশিস দত্ত। তার আগে গোষ্ঠ পালের পাদদেশে মাল্যদান করে এসেছেন। তাঁবুতে সচিব সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরেই সটান চলে যান গ্যালারির নীচে 'অমর একাদশ' এর মূর্তির কাছে। হাতজোড় করে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। সেখানেই তাঁকে ফুলের স্তবক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। হয় পুষ্পবৃষ্টি। তারপর মোহনবাগানের সবুজ গালিচায় দুই কর্তার মালাবদল। মোহনবাগান সমর্থকদের জমকালো সংবর্ধনা নতুন সভাপতিকে। ফুল, মালা, মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। ঠিক দু'দিন আগেই সচিবের দায়িত্ব নেন সৃঞ্জয় বসু। সেদিনও উৎসবে খামতি ছিল না। তবে এদিন আয়োজন, মানুষের সমাগম, আবেগ যেন আগের দিনকে ছাপিয়ে যায়।
৩০ বছর মোহনবাগানে কাটিয়ে ফেলেছেন। ১৯৯৫ সালে ফুটবল কনভেনর হিসেবে হাতেখড়ি। যা আনুষ্ঠানিক কোনও পদই নয়। সেখান থেকে অর্থসচিব, সচিবের পর এবার সভাপতি। ময়দানে তাঁর পূর্ব পরিচিত কেউ ছিল না। কাজ দিয়ে নিজের জায়গা করে নেন। পদের গ্রাহ্য করেন না। এবারও সেই কাজ দিয়েই মোহনবাগান সভাপতির সংজ্ঞা বদলে দিতে চান। দেবাশিস দত্ত বলেন, 'আমি শাহরুখ খান, অভিষেক বচ্চন বা অমিতাভ বচ্চন নই। আমি একজন আদ্যপান্ত মোহনবাগান সমর্থক। এইভাবেই কাটাতে চাই। কাজ করলে বাবা, দাদা, ঠাকুরদার পরিচয় লাগে না। আমি ফুটবল ভাষার বাইরে কিছু জানি না, বুঝিও না। পদ দিয়ে কাজ হয় না। কাজের লোক সম্মান পায়। আমি সমর্থক হিসেবে কাজ করব। দু'জন মিলে পলিসিগত সিদ্ধান্ত নেব। এবার মোহনবাগানের সভাপতির ভূমিকা পাল্টে যাবে।'
একা নয়, এবার জোড়া স্ট্রাইকারে খেলবেন। পায়ে পা মিলিয়ে চলবেন। কিন্তু মাঠে স্ট্রাইকারদের মধ্যেও ইগোর সমস্যা হয়। সেটা রোখা কি সম্ভব? দেবাশিস দত্ত বলেন, 'এবছর আমরা ডবল স্ট্রাইকারে খেলছি। সৃঞ্জয় এবং দেবাশিস। ৪-৪-২ ফরমেশনে স্টপার খেললে একজন আরেকজনকে কভার করে। আমাদেরও এই মানসিকতা নিয়ে চলতে হবে। ময়দানের সেরা জুটি ব্যারেটো-বাইচুং আমার হাতে তৈরি। ওদের দু'জনের মধ্যে ইগো দেখিনি। দু'জনেই মোহনবাগান অন্ত প্রাণ। মোহনবাগান ক্লাবকে ভালবাসলে কীসের ইগো!' গত দু'মাসের কাদা ছোড়াছুড়ির পর উচ্চপদে মিটমাট হয়ে গিয়েছে। হাত মিলিয়েছেন দেবাশিস দত্ত এবং সৃঞ্জয় বসু। কিন্তু দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে এখনও বিভেদ স্পষ্ট। ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন বাগানের নতুন সভাপতি। এই প্রসঙ্গে দেবাশিস দত্ত বলেন, 'রাতারাতি একটা মিরাকেল বা ম্যাজিক হওয়া সম্ভব নয়। মাঝে একটা বড় বিভাজন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ছোটরা বাবা-মায়ের থেকেই শেখে। দু'জনের মধ্যে ভাব থাকলে সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। তাই রাতারাতি কিছু হবে না। যে পরিপক্বতা আমাদের আছে, তাঁদের নেই। আমরা তাঁদের ইন্ধন দিলে সমস্যা বাড়বে। বাকিদের মানতে হবে তাঁরা সৃঞ্জয় এবং দেবাশিসের লোক, একজনের না। সবাই মোহনবাগানকে ভালবাসে। ব্যাক্তির থেকে প্রতিষ্ঠান বড়। তাই কোনও সমস্যা হবে না।' জোড়া স্ট্রাইকারে বাগানে ফুল ফুটবে না ইগোর লড়াই 'হানিমুন পিরিয়ড' এ যবনিকা টানবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে ক্লাবের স্বার্থে প্রশাসনিক স্তরে 'বাইচুং-ব্যারেটো' জুটির সাফল্য কামনা করবে মোহনবাগানিরা।
