আজকাল ওয়েবডেস্ক: মৃত্যুর ১৫ বছর পর টেস্টে অভিষেক! অলৌকিক কাণ্ড! অবাক হচ্ছেন? এমন কাণ্ডই ঘটেছে। সাল ১৯১৫। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জার্মানদের আক্রমনের মোকাবিলা করতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে ব্রিটেন। মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সেই তালিকায় রয়েছে প্রচুর তরুণ। যুদ্ধের জন্য আর্মিতে নাম নথিভুক্ত করা ছিল অনেকের। সেই তালিকায় ছিলেন হ্যারি লি। মিডলসেক্সের একজন ক্রিকেটার যিনি লন্ডন রেজিমেন্টের ১৩তম ব্যাটেলিয়নে যোগ দেন। অউবার্স রিজের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, সেই যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরিবার শেষকৃত্যও সম্পন্ন করে ফেলে। কিন্তু মৃত্যুর ১৫ বছর পরে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলেন লি। ১৯৩১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। অর্থাৎ, মৃত্যুর ঘোষণার পর ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে প্রথমবার ডাক আসে তাঁর। 

যুদ্ধে যাওয়ার সময় মিডলসেক্সের ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। বাঁ পায়ের উরুতে গুলি লাগলেও তিনি বেঁচে যান। ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। জার্মান রেড ক্রসের হাতে লিকে তুলে দেওয়ার আগে ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে থাকেন। সেই অক্টোবরেই ইংল্যান্ডে ফেরার অনুমতি পান‌ তিনি। ডিসেম্বরে সেনাবাহিনী ছাড়েন। কিন্তু চিকিৎসাধীন থাকাকালীন পায়ের পেশি অসাড় হয়ে যায়। যার ফলে একটি পা ছোট হয়ে যায়। ওয়ার অফিসে ক্লার্কের চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের ক্রিকেট ছাড়েননি। লানসিং কলেজের বিরুদ্ধে রয়্যাল আর্মি সার্ভিস কর্পসের হয়ে শতরান করেন। তারপর ভারতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কোচবিহারের মহারাজার ফুটবল এবং ক্রিকেট কোচ হিসেবে কাজ করেন। ১৯১৮ সালের মার্চে ভারতে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কামব্যাক করেন। মহারাজা অফ কোচবিহার একাদশের হয়ে খেলেন। প্রথম ইনিংসে পাঁচ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নেন। কিন্তু ১ উইকেটে ম্যাচ হারে দল। ভারতে ক্রিকেট চালিয়ে যান। ভারতের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক সিকে নাইডু তাঁর প্রশংসা করেন। 

১৯১৯ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট আবার চালু হয়, এবং মিডলসেক্সে ফেরেন লি। পরের দুটো মরশুম অনবদ্য ক্রিকেট খেলেন। শেষপর্যন্ত ১৯৩১ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টে প্রথমবার ডাক পান। সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্ট অ্যান্দ্রুজ কলেজে কর্মরত ছিলেন তিনি। পার্সি চ্যাপম্যানের দলের সাতজন প্লেয়ারের চোট ছিল। পরিবর্ত হিসেবে ডাক পান লি। শেষপর্যন্ত নিজের মৃত্যুর ঘোষণার ১৫ বছর পর টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। এখানেই গল্প শেষ নয়। ইংল্যান্ডের হয়ে ম্যাচ খেলার পরও টেস্ট ক্যাপ পাননি। যে স্কুলে তিনি চাকরি করতেন, সেখানে অনুমতি না নিয়ে খেলতে যাওয়ার জন্য লিকে ক্যাপ বা ব্লেজার দেওয়া হয়নি।