আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ ইলেকট্রিক মিস্ত্রির ছেলেকে নিয়ে ধন্য ধন্য করছে ভারতীয় ক্রিকেট।


নাম্বুরি নাগারাজু ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। স্ত্রী গায়ত্রী দেবী গৃহবধূ। তাঁদের ছেলে তিলক ভার্মা।


রবিবার দুবাইয়ের মাঠে যখন বাঁহাতি ব্যাটার ব্যাট করতে নামছেন। তখন সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন অভিষেক শর্মা, শুভমান গিল ও অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। স্কোরবোর্ডে উঠেছে ২০। গোটা দেশের হার্টবিট বেড়ে গেছে। ১৪৭ করতে পারবে না টিম ইন্ডিয়া!‌ শেষে পাকিস্তানের কাছে হারতে হবে।


অকুতোভয় তিলক কিন্তু অতসত ভাবেননি। প্রথম সঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটি। এরপর শিবম দুবেকে নিয়ে মহা গুরুত্বপূর্ণ জুটি। দু’‌জনে ফিরে গেলেও ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিলক। ৬৯ রানে অপরাজিত। অথচ জানলে অবাক হবেন ক্রিকেট শিখতে যাওয়ার টাকাই ছিল না তিলকের!‌


এটা সবার জানা ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দরাবাদের ব্যাটারদের একটা আলাদা কদর রয়েছে। মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণদের সেই ধারাই বয়ে নিয়ে চলেছেন তিলক। ছোটবেলায় দেখেছেন টানাটানির সংসার। কষ্ট করে ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের সেই কষ্টের প্রতিদান এখন দিচ্ছে তিলকের ব্যাট। গত কয়েক বছর ধরে দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেওয়া তিলকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে শুরু। মাত্র দু’বছরে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তাঁকে ছাড়া টিম ইন্ডিয়ার টি–টোয়েন্টি দল এখন ভাবাই যায় না।


তখন বয়স ১১। তিলকের টেনিস বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং দেখে সম্ভাবনা দেখেছিলেন তাঁর কোচ সালিম বায়াশ। তিনিই তিলককে নিয়ে যান নিজের লিগালা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেই থেকে শুরু তিলকের ক্রিকেট সাধনা। বাড়ি থেকে অ্যাকাডেমির দূরত্ব ছিল ৪০ কিলোমিটার। সেই পথ প্রতি দিন যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তিলকের পরিবারের। কোচ সালিমই সেই দায়িত্ব নেন। নিজের স্কুটারে প্রতি দিন তিলককে নিয়ে যেতেন, আবার প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি পৌঁছে দিতেন।
২০১৮–১৯ মরসুমে হায়দরাবাদের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তিলক ভার্মার। ব্যস, তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আইপিএলে মুম্বইয়ের হয়ে নজর কাড়ার পর সুযোগ পান ভারতীয় দলে। তাঁর ব্যাটিং দেখে নিজের তিন নম্বর জায়গা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সূর্য। তবে তিনি যেখানেই নামুন না কেন, একই রকম খেলেন। রবিবারের দুবাই সেই ছবিটাই দেখল। কোচ ও অধিনায়কের মুখে হাসি ফুটিয়ে মাঠ থেকে ফিরলেন তিলক।
কিন্তু এই তিলক ভার্মার উপরেই এক সময় ভরসা দেখাতে পারেননি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ডিয়া। অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্টের নির্দেশে খেলার মাঝে তিলককে ‘রিটায়ার্ড আউট’ হয়ে ফিরতে হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কিন্তু তিলক তা নিয়ে বিতর্ক বাড়াননি। কারণ নিজের উপর অগাধ আস্থা ছিল তাঁর। তিনি যে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারেন, সেটা ম্যাচের পর ম্যাচে দেখিয়েছেন। আরও এক বার সেটা করে দেখালেন তিলক। সেটাও আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এশিয়া কাপ ফাইনালে।