আজকাল ওয়েবডেস্ক: রানীর দেশে চলছে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ। কিন্তু ক্রিকেটের থেকে বহু দূরে তিনি। লন্ডনের রাস্তার তাঁকে দেখা গেলে চেনা দুস্কর। ব্যাট ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছেন তুলি। একসময় শচীন তেন্ডুলকরের বিরুদ্ধে দাপটের সঙ্গে খেলা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জ্যাক রাসেল এখন চিত্রশিল্পী। লন্ডনের অভিজাত এলাকায় ছবি আঁকতে ব্যস্ত তিনি। নিজের ছবি প্রচারের খাতিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছেন। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে নেই। একমাত্র ইমেলের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। সরাসরি দেখা করতে গেলে চলে যেতে হবে লন্ডনের প্রাণকেন্দ্র ক্রিস বিটলস গ্যালারিতে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮, দাপটের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছেন উইকেটকিপার ব্যাটার। শচীন তেন্ডুলকর, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, অনিল কুম্বলেদের বিপরীতে খেলেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৫৪টি টেস্ট এবং ৪০টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন।
৬১ বছরের রাসেল ব্যাটিং স্ট্যান্সের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। সানগ্লাস পরে খেলতেন। স্ট্যাম্পের পেছনে হ্যাট পরে কিপিং করতেন। ইংল্যান্ডের সেরা উইকেটকিপারদের মধ্যে অনায়াসে জায়গা করে নেবেন। অবসরের ২০ বছর পরও আঁকার মাধ্যমে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছেন। রাইডার স্ট্রিটে তাঁর গ্যালারিতে গেলে ফিরে যেতে হবে স্মৃতির সরণিতে। তাঁর ফলোয়ারের অধিকাংশ ভারতীয়। সম্প্রতি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা রঞ্জিতসিংজির ছবি আঁকেন তিনি। কিন্তু তাঁকে কেন বেছে নিলেন? রাসেল বলেন, 'প্রতি বছর আমি ইতিহাসের পাতা থেকে একজন করে ক্রিকেটার তুলে আনি। গতবছর ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিনকে তুলে ধরেছিলাম। অ্যাশেজের বিতর্কিত চরিত্র। এবছর আমি রঞ্জিতসিংজিকে বেছে নিয়েছি। কারণ উনি ইতিহাস সমৃদ্ধ। রঙিন চরিত্র। স্ট্রোক প্লেয়ার ছিলেন। প্রদর্শনীতে এটা আমার অন্যতম প্রিয় ছবি। এখন ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ চলছে। তাই এটাই আদর্শ সময়।'
ক্রিকেট ভালবাসলেও, পেন্টিং তাঁর প্রথম প্রেম। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ২০০৪ পর্যন্ত কাউন্টি খেলেন। গত ২০ বছর ধরে ছবি আঁকছেন। প্রত্যেক দিন নতুন কিছু আঁকেন। বর্তমানে ছবি আঁকাই তাঁর একমাত্র কাজ। ক্রিকেটজীবন থেকে ধরলে, মোট ৩৫-৩৬ বছর ধরে ছবি আঁকছেন। যা তাঁর ক্রিকেট জীবন থেকে অনেক বেশি। বরাবরই ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। ইংল্যান্ডের ম্যাচের বৃষ্টি বিরতির সময় ছবি আঁকা শুরু করেন। সতীর্থরা তখন বিরক্তি প্রকাশ করতেন। তাঁর ২০১৯ অ্যাশেজ সিরিজের ছবি ২৫ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে। ক্রিকেটের থেকে চিত্রশিল্পী হিসেবে বেশি রোজগার করছেন। তবে টাকার জন্য নয়, তিনি আঁকতে ভালবাসেন। রাসেল বলেন, 'তখনকার দিনে আমরা ভাল টাকাই পেতাম। তবে এখন অনেক বেশি। বর্তমানে ইংল্যান্ডের হয়ে ৫-১০ বছর খেললে আর অন্য কোনও কাজ করার প্রয়োজন পড়বে না। তবে আমি টাকার জন্য ছবি আঁকি না। আমি আঁকতে ভালবাসি। আমি আঁকায় আসক্ত। তবে ক্রিকেটের থেকে আমি ছবি এঁকে বেশি উপার্জন করছি। ক্রিকেট এবং ছবি আঁকা, দুটো কাজ আমি ভালবাসি, সেটাই করছি।'
দু'বার ভারত সফরে এসেছেন। ১৮৮৯ নেহরু কাপ এবং ১৯৯৬ বিশ্বকাপ। তারপর আর ভারতে আসেননি। তবে ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামের ছবি আঁকেন। সেটা তাঁর সেরা ছবিগুলোর মধ্যে স্থান পাবে। রাসেল বলেন, 'আমি ভারত এবং পাকিস্তানে যেতে ভালবাসতাম। ছুটির দিনে দারুণ সময় কাটাতাম। আমি স্থানীয় বাজারে গিয়ে স্থানীয় মানুষদের ছবি স্কেচ করতাম। একাধিকবার আমার হোটেলের দরজা ধাক্কা দিয়ে অনেকে তাঁদের ছবি স্কেচ করতে বলেছে। আমি রাতে রেস্তোরাঁয় বসে রেস্তোরাঁর মানুষদের ছবি আঁকতাম। আমি জীবনের বাকি সময়টা সেখানে কাটাতে পারি। আমি ভারত এবং পাকিস্তানে দারুণ সময় কাটিয়েছি।' এখনও জাভাগল শ্রীনাথকে মনে আছে তাঁর। আঁকা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ক্রিকেটের খবরাখবর রাখেন। লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ড তৃতীয় টেস্ট দেখতে হাজির ছিলেন। রাসেল মনে করেন, জেমি স্মিথের ইংল্যান্ডের সেরা উইকেটকিপার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রশংসা করেন ঋষভ পন্থেরও।
