আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবি হাঁসদা। বাংলার ফুটবলের নয়া নক্ষত্র। গত কয়েকদিনে সর্বত্র এই নামটাই জ্বলজ্বল করছে। অথচ একটা সময় ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছেলে রবি। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অনটনের মধ্যে দিয়েই তাঁর ফুটবলার হয়ে ওঠা। বাবা টোটো চালক ছিলেন। মা চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত। জনাইয়ের ফুটবল কর্তা অসিত রায়ের হাত ধরে কলকাতা লিগে কাশিপুর স্বরস্বতী ক্লাবে সই করেন রবি। সেখান থেকে রেনবো। তারপর কাস্টমসে সই করেন। কলকাতা লিগের এই ক্লাবের হয়ে খেলেই জাতীয় গেমসে বাংলা দলে সুযোগ পান। বাংলাকে জাতীয় গেমসে চ্যাম্পিয়ন করায় বড় ভূমিকা নেন রবি। তারপর সন্তোষ ট্রফির দলে ডাক পান। কিন্তু এখানেই ঘটে বিপত্তি। সন্তোষের বাছাই পর্বে খেলাকালীন ২০২৩ সালের শুরুতে হাঁটুতে গুরুতর চোট পান। পুরো বছরটা কাটে মাঠের বাইরে। কোনও ক্লাব ছিল না। পাশে পাননি কাউকে। 

রবির রুটিরোজগার ছিল খেপ খেলা। তাতেই চলত সংসার। চোট পাওয়ার ফলে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। একটা সময় হতাশায় ডুবে যান। সেই সময় কাস্টমস ক্লাবের কর্তাদের পাশে পান। ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ মেলে। কিন্তু পথ একেবারেই মসৃণ ছিল না সন্তোষের নায়কের। ফিরে আসার লড়াইয়ে বড় ধাক্কা খান। সন্তোষ ট্রফির বাছাই পর্ব শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগেই বাবার আচমকা মৃত্যু। রবির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। মা, স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার ২৫ বছরের আদিবাসী ফুটবলারের। পরিবারের পুরো দায়িত্ব তাঁর ওপর পড়ে। কাস্টমস ক্লাবের কর্তাদের চেষ্টায় মাঠে ফেরেন। কলকাতা লিগে ৯ গোল করার পর সন্তোষ ট্রফিও রবির আলোয় আলোকিত হয়। 

তিনটে লক্ষ্য নিয়ে সন্তোষ ট্রফির মূলপর্বে খেলতে হায়দরাবাদ যান সুনীল ছেত্রীর ভক্ত। জানতেন চ্যাম্পিয়ন হলে একটা চাকরি কপালে জুটতে পারে। যাতে অভাব, অনটনের সংসারে একটু খেয়ে পরে বাঁচতে পারেন। ছিল ব্যক্তিগত লক্ষ্যও। সন্তোষে নিজেকে প্রমাণ করে আইএসএলের দলে খেলার স্বপ্ন ছিল রবির। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলেই, তাঁর আরও এক স্বপ্নের দরজা খুলে যেতে পারে। সব ফুটবলারই চান, দেশের জার্সিতে খেলতে। রবিও সেই স্বপ্ন দেখেন। আপাতত প্রথম দুই লক্ষ্যপূরণ হয়ে গিয়েছে বলা যেতে পারে। বৃহস্পতিবার বাংলার ফুটবলারদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। দ্বিতীয়ত, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের মধ্যে একটি ক্লাবে সই করতে চলেছেন রবি। দিন দুয়েকের মধ্যে সেটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, খুঁজলে হয়তো ভারতীয় ফুটবলে একাধিক রবি হাঁসদা পাওয়া যাবে। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও, মঞ্চের অভাবে যা বিকশিত হয় না। স্থানীয় ছেলেদের অবহেলা করে ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের পেছনে ছোটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানে হাতেগোনা বাঙালি ফুটবলার রয়েছে। বঞ্চনার যোগ্য জবাব রবি হাঁসদা, নরহরি শ্রেষ্ঠা, মনোতোষ মাঝি, চাকু মান্ডিদের সাফল্য। এবার কি ক্লাবকর্তাদের হুঁশ ফিরবে?