সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: কলকাতা লিগ থেকে উত্থান। তারপর সরাসরি আইএসএল। গত মরশুম থেকে স্বপ্নের উড়ানে পিভি বিষ্ণু। ইতিমধ্যেই ইস্টবেঙ্গলের সিনিয়র দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। গতির পাশাপাশি পায়ের কাজ ভাল। গোল চেনেন। আগের বছর ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে উদীয়মান ফুটবলারের তকমা পান। এবছর আরও বেশি পরিণত। অন্য দলের কোচদের মুখেও ঘোরে বিষ্ণুর নাম। প্রশংসা পেতে কার না ভাল লাগে! উপভোগ করেন কেরলের উইঙ্গারও। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে চান না। আগের বছর তৎকালীন জাতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কুয়েজকে তাঁর দলের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলারকে জাতীয় দলে নেওয়ার অনুরোধ করেন অস্কার ব্রুজো।‌ কিন্তু সিনিয়র দলে এখনও ডাক পাননি। সুযোগ জোটে অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে। এবার সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে চান। কলকাতা লিগ জেতার পর বিষ্ণু বলেন, 'কলকাতা লিগ দু'বার জিতলাম। আশা করছি আইএসএলে এবার আমরা ভাল রেজাল্ট করবে। কিন্তু আমার লক্ষ্য একটাই। জাতীয় দলে সুযোগ পেতে চাই। দেশের জার্সিতে ভাল খেলতে চাই।' ব্যক্তিগত টার্গেট সেট করে ফেলেছেন কেরলের ফুটবলার। জুনিয়র ফুটবলারদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন খালিদ জামিল। সুতরাং, এইভাবে খেলা চালিয়ে যেতে পারলে, তাঁর স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। 

সোমবার হ্যাটট্রিক বা তারও বেশি গোল করতে পারতেন বিষ্ণু। কিন্তু একাধিক সুযোগ নষ্ট করেন। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে কি মানসিক চাপ বেশি ছিল? স্কোরশিটে নাম না তুলতে পেরে কি আফশোস হচ্ছে? বিষ্ণু বলেন, 'একদিন এরকম হতেই পারে। গোল মিস খেলারই অঙ্গ। গোল পেলে অবশ্যই ভাল লাগত। তবে আমার ওপর কোনও বাড়তি চাপ ছিল না।'

জোড়া জয়ের পর অদ্ভুত একটি কথা শোনালেন বিনো জর্জের অন্যতম ভরসা। তাঁর কাছে আইএসএলের থেকে কলকাতা লিগ কঠিন। যা হয়ত অবাক করবে ফুটবলপ্রেমীদের। তবে তার ব্যাখ্যাও দেন। বিষ্ণু বলেন, 'আমার মনে হয়, আইএসএলের থেকে কলকাতা লিগ কঠিন। অল্প সময়ের টুর্নামেন্ট। তারমধ্যে একটা দুটো ম্যাচে হারলেই লিগ কঠিন হয়ে যায়। তারওপর বিভিন্ন মাঠে খেলতে হয়। একাধিক জায়গায় খেলা পড়ে। মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। সব মিলিয়ে কলকাতা লিগ মোটেই সহজ নয়। আমার কাছে আইএসএলের থেকে কঠিন।' পরপর কলকাতা লিগ জয়ের সাক্ষী তিনি। আগেরবারের থেকে এবারের জয়কে এগিয়ে রাখলেন। বিষ্ণু বলেন, 'দুটো লিগ জয়ই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবারের খেতাব জয়কে আমি কিছুটা এগিয়ে রাখব। তার কারণ আমি চোট সারিয়ে মাঠে ফিরেছি। মানিয়ে নিয়ে নিজের সেরাটা দিতে পেরেছি। আগের বছরের তুলনায় নিজেকে আরও বেশি উজাড় করে দিতে পেরেছি।' লিগ জয় নিজের পরিবার এবং সমর্থকদের উৎসর্গ করলেন কেরলের উইঙ্গার। 

বছর দুয়েক আগে মহমেডানের জার্সিতে তাঁর গোলই ইস্টবেঙ্গলের খেতাব কেড়েছিল। এবার তাঁর গোলেই এগিয়ে যায় লাল হলুদ। ডেভিড লালনসাঙ্গা‌ জানিয়ে দিলেন, ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে এটাই তাঁর সেরা গোল। খেতাবি ম্যাচে গোল পেয়ে খুশি মিজো স্ট্রাইকার। ডেভিড বলেন, 'আমি এর আগেও অনেক গোল করেছি। তবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এটাই আমার সেরা গোল। চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে গোল করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। এটা বাড়তি প্রেরণা।'

ডেভিড খুশিতে ডগমগ করলেও তাঁর সতীর্থ জেসিন‌ টিকে কিছুটা হতাশ। পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নেমেও গোল করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু খেতাবি ম্যাচে গোল পা পাওয়ার আফশোস ধরা পড়ে তাঁর গলায়। জেসিন‌ বলেন, 'কলকাতা লিগ জিতে দারুণ লাগছে। তবে আমি গোল পেলে আরও ভাল লাগত। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে গোল করতে চেয়েছিলাম।' লিগ জয়ের আনন্দ সতীর্থদের সঙ্গে ভাগ করে নেন গুইতে ভ্যানলালপেকা‌। কোচ বিনো জর্জের সঙ্গে ইলিশ নিয়ে সেলিব্রেশনে মাতেন বিষ্ণু, জেসিন সহ কেরলের ফুটবলাররা। আস্তো ইলিশ হাতে ক্যামেরায় পোজ দেন ডেভিড‌ও।