ইস্টবেঙ্গল-৪ শ্রীনিধি-০
(জয়, সল, হামিদ, জিকসন)

কৃশানু মজুমদার: ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোর সঙ্গে কল্যাণীর রোম্যান্স যেন মান্না দে-র সেই বিখ্যাত গানের লাইন, 'হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে'' এই কল্যাণীতেই এলকো শ্যাটরির ইউনাইটেড স্পোর্টসকে  ৩-১ গোলে মাটি ধরিয়েছিল অস্কার ব্রজোঁর স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া। সেই সময়ে ইউনাইটেড স্পোর্টসের নাম ছিল প্রয়াগ ইউনাইটেড।

২০১২-১৩-র সেই মরশুমের পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ চোদ্দো বছর। এই দীর্ঘ সময়ে গঙ্গা দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে অনেক জল। স্প্যানিশ মায়েস্ত্রো অস্কার এখন ইস্টবেঙ্গলের হেডস্যর। আই লিগ থেকে আইএসএলের মঞ্চে তিনি। 

সেই অস্কার শিল্ডের প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলে দুরমুশ করলেন শ্রীনিধি ডেকানকে। সেই কল্যাণীতেই অমৃত কুম্ভের খোঁজ পেল অস্কারের লাল-হলুদ। শিল্ডের প্রথম ম্যাচ। বেলা তিনটেয় বল গড়াবে। তার আগে বেলঘরিয়া, সোদপুর, জগদ্দল, নৈহাটীতে তুমুল বৃষ্টি। কল্যাণীতেই কেবল বরুণদেবতার দেখা নেই। 

ম্যাচের আগে বৃষ্টির দর্শন সেখানে পাওয়া না গেলেও, গোলের দেখা মিলল। থুড়ি, গোলের বর্ষণ হল। শুরু করলেন জয় গুপ্তা। আর শেষটা করলেন পরিবর্ত হিসেবে নাম জিকসন সিং। ২১ থেকে ৫৭ মিনিটের মধ্যেই চার-চারটি গোল করল ইস্টবেঙ্গলপ্রথমার্ধে দু'টিদ্বিতীয়ার্ধেও দু'টি

বাকি দুটি গোল করেন সল ক্রেসপোহামিদ আহদাদ। এই চারটি গোলের মধ্যে দুটি গোলের ক্ষেত্রে বিপিনের অবদান অনেকটাই। উইং থেকে ভাসানো বিপিনের সেন্টারে প্রথমার্ধে বিষ ঢালেন সল। আর হামিদ আহদাদের ভলি খুঁজে নেয় শ্রীনিধির জাল।

শ্রীনিধি কোচ আলভারো স্বীকার করে গেলেন, ইস্টবেঙ্গল ধারে ও ভারে অনেক শক্তিশালী। দুর্দান্ত সব ফুটবলার লাল-হলুদ শিবিরে। তুলনায় তাদের দলে রক্তাল্পতা। এই বিরাট ব্যবধানে হার তাদের কাছে শুধু পরাজয় নয়, এটা তাদের কাছে ভবিষ্যতের শিক্ষাও বটে। শ্রীনিধির কোচ মনে করছেন, শক্তিশালী ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খেলে তাঁর অনভিজ্ঞ ছেলেরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।

চার গোল হলেও কেন পাঁচ গোল হল না, কেন হাফ ডজন গোলে জয় দিয়ে শিল্ড অভিযান শুরু করল না ইস্টবেঙ্গল, এমন সব প্রশ্ন ধেয়ে এল অস্কারের দিকে। স্প্যানিশ কোচ তাঁর লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন। তাঁর পাখির চোখ শিল্ড এবং তার পরে সুপার কাপ। পরের ম্যাচগুলোর আগে তাঁর বিদেশি তারকাদের দেখে নিলেন। ভারতীয় ডিফেন্ডারদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দলের শক্তি-দুর্বলতা সব নোট করে নিলেন তাঁর ডায়রিতে।  এত ভাল-ভাল-র মধ্যেও মন্দ রয়েছে। কল্যাণীর মাঠ নিয়ে সন্তুষ্ট নন লাল-হলুদ কোচ। মাঠ সমস্যার জন্যই খেলার গতি কমে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন পোড়খাওয়া কোচ। তাঁর পরিকল্পনা এই মাঠের জন্যই কখনও কখনও বিঘ্নিত হচ্ছিল বলে জানান অস্কার।

গত বছরের ৮ অক্টোবর ইস্টবেঙ্গলের রিমোট কন্ট্রোল হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্কার। ডিকেন্সের লাইন উদ্ধৃত করে বললে, ''দ্যাট ওয়াজ দ্য ওয়ার্স্ট অফ টাইমস'' বিপথগামী এক দলের দায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়ার বুকের খাঁচা দেখিয়েছিলেন অস্কার। লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবে আজ তাঁর এক বছর পূর্ণ হল।

কোচ হয়ে কাকভোরে শহর কলকাতায় পা রেখেই সন্ধ্যায় বাঙালির বড় ম্যাচে নেমে পড়েছিলেন তিনি। সেই ডার্বিতে হার স্বীকার করতে হয়েছিল ভিগোর গ্যালিসিয়ার বাসিন্দাকে। সেই তিনিই আবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়েছেন এবারের ডুরান্ড কাপে।

পূর্বসূরি কার্লেস কুয়াদ্রাত ইস্টবেঙ্গলকে মাঝদরিয়ায় ডুবিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। শূন্য থেকে শুরু করে ইস্টবেঙ্গলকে টেনে তোলার শপথ নিয়েছিলেন অস্কার। এবছর তিনি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল ভক্তদের। অস্কার-প্রাপ্তি কি হবে লাল-হলুদের

ময়দানের বটবৃক্ষ ক্লাবে তাঁর কোচিং জীবনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে লাল-হলুদ সেনারা দারুণ এক জয় উপহার দিলেন প্রিয় কোচকে। শুরুতেই দামামা বাজিয়ে শিল্ড শুরু করল ইস্টবেঙ্গলদৌড় শুরু হয়েছে লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবের। সমর্থকরা বলছেন, ''অস্কার এই দৌড় চলতেই থাকুক''