নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি - ৬ ( আশির, পার্থিব, থই, জাইরো, আন্দ্রে, আলাদিন)
ডায়মন্ড হারবার - ১ (লুকা)
সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: শনিবাসরীয় সন্ধেয় থামল ডায়মন্ড হারবারের অশ্বমেধের ঘোড়া। যুবভারতীতে ছড়াল না হীরের দ্যুতি। আবারও জ্বলল আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। আগের বছর তাঁর গোলেই শেষ হয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। এদিন নিজে শেষমুহূর্তে স্কোরশিটে নাম তোলেন। কিন্তু একাধিক গোলের কারিগর। তিনটে অ্যাসিস্ট। একটি গোল। আইএসএলের তিনটে দলকে হারানোর পর চতুর্থ দলের কাছে হোঁচট খেল কিবু ভিকুনার দল। কার্যত উড়ে গেল। জুয়ান পেদ্রো বেনালি বুঝিয়ে দিলেন আই লিগ এবং আইএসএল দলের মধ্যে পার্থক্য। পরপর দু'বার কলকাতায় বাংলার দলের মুখের গ্রাস কাড়ল জন আব্রাহামের দল। মোহনবাগানের পর ডায়মন্ড হারবার। শনিবার ডুরান্ড কাপের ফাইনালে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসির কাছে ৬-১ গোলে হার ডায়মন্ড হারবারের। জুয়ান পেদ্রো বেনালির দলের ছয় গোলদাতা আশির আখতার, পার্থিব গোগোই, থই সিং, জাইরো বুস্তারা, আন্দ্রে গাইতান এবং আলাদিন আজারাই। লুকা মাজেনের গোল ডায়মন্ড হারবারের সান্ত্বনা পুরস্কার মাত্র। সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে হারানো দল এদিন খড়কুটোর মতো উড়ে গেল। ইউনাইটেড স্পোর্টস হওয়া হল না ডায়মন্ড হারবারের। নবাগত দল হিসেবে সুব্রত ভট্টাচার্যের হাত ধরে ডুরান্ড জিতেছিল তাঁরা। কিন্তু পারলেন না কিবু ভিকুনা। ডুরান্ড কাপের ফাইনালের ইতিহাসে ২০০৯ সালে ৫-১ গোলে চার্চিল ব্রাদার্সের কাছে হেরেছিল মোহনবাগান। তারপর সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার।
'ডুরান্ডের ময়দানে, ডায়মন্ড লড়ছে বাংলার সম্মানে'। 'ডুরান্ডে ডায়মন্ড হারবার, ময়দানে বেঙ্গল টাইগার'। ডুরান্ড ফাইনালে যুবভারতীতে দেখা যায় বিশেষ টিফো। প্রায় হাজার ২৫ দর্শক মাঠ ভরিয়েছিল। কিন্তু বিজয় মিছিলে সামিল হওয়া হল না। উল্টে হাফ ডজন গোলে লজ্জার বোঝা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হল অভিষেক ব্যানার্জির দলকে। প্রথমার্ধের শেষে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল ডায়মন্ড হারবার। দ্বিতীয়ার্ধে চার গোল। প্রথম ৪৫ মিনিট যথেষ্ঠ লড়াই করে বাংলার দল। এমনকী প্রথমার্ধের কিছুটা সময় দাপট নিয়ে খেলেও। কিন্তু আই লিগ এবং আইএসএলের মধ্যে পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল নর্থ ইস্ট। আগের দিন কোচ বেনালি বলেছিলেন, ফাইনালে আইএসএল এবং আই লিগের দল বলে কিছু হয় না। কিন্তু এদিন যেন পার্থক্য পরিষ্কার। দ্বিতীয়ার্ধে আত্মসমর্পণ। বিরতির পর বেনালির কয়েকটি পরিবর্তনে ম্যাচের গতি আরও বেড়ে যায়। যার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ ডায়মন্ড হারবার। গ্রুপের শেষ ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে পাঁচ গোল খেয়েছিল কিবুর দল। এদিন ছয় গোল।
দলে একটি পরিবর্তন করেন কিবু। নরহরি শ্রেষ্টার জায়গায় নামান গিরিক খোসলাকে। শুরুতেই একটি ঝাপটা দেওয়ার চেষ্টা করে নর্থ ইস্ট। চার মিনিটের মাথায় আজারাইয়ের শট বাঁচান মিরশাদ। তারপরের কিছুটা সময় ডায়মন্ড হারবারের। নর্থ ইস্টের মাঝমাঠের সঙ্গে আজারাইয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন কিবু। যায় ফলে বেশ কিছুক্ষণ বল পায়নি আজারাই। এই সময় বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করে ডায়মন্ড হারবার। ২৩ মিনিটে গিরিকের ক্রস থেকে জবির হেড বাঁচায় গুরমীত। তার চার মিনিট পর পলের পাস থেকে সাইড নেটে মারেন জবি। ডায়মন্ডের এই দুটোই সেরা সুযোগ। ম্যাচের ৩১ মিনিটে প্রথম গোল নর্থ ইস্টের। মায়াকান্নানের শট মিরশাদের বুকে লেগে প্রতিহত হয়। ফিরতি শটে গোল আশির আখতারের। ৩৮ মিনিটে সিটার মিস করেন জোস ম্যানুয়াল নুনেজ। তবে ব্যবধান বাড়ানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। বিরতির আগে ৪৫+১ মিনিটে ২-০ করেন পার্থিব গোগোই। একক কৃতিত্বে দূরপাল্লার শটে গোল।
দ্বিতীয়ার্ধ পুরোপুরি একপেশে। ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায় লুকা, জবিরা। লকগেট খুলে যায়। ম্যাচের ৫০ মিনিটে ৩-০। আলাদিনের মাইনাস থেকে থই সিংয়ের গোল। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে ডায়মন্ড হারবারের একমাত্র গোল। জবি জাস্টিনের শট লুকার গায়ে লেগে গোলে ঢোকে। বিরতির পর কিবুর দলের প্রত্যাবর্তনের কোনও আশাই ছিল না। আজারাইয়ের পায়ে বল পড়লেই পৌঁছে যাচ্ছিলেন বিপক্ষের বক্সে। ডায়মন্ডের রক্ষণে প্রথমদিকে নিজে আটকে যান। কিন্তু তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। গোল করার বদলে তিনটে গোল করালেন। শেষ ১০ মিনিট ডায়মন্ডের রক্ষণ ছারখার। ৮১ মিনিটে ৪-১ করেন জাইরো। বিপক্ষের রক্ষণকে দাঁড় করিয়ে বল রিসিভ করে টার্ন নিয়ে গোল। তার ছয় মিনিটের মধ্যে আবার গোল। স্কোরশিটে নাম তোলেন পরিবর্ত ফুটবলার জাইরো বুস্তারা। শুধু আজারাইয়ের গোল পাওয়ার অপেক্ষা ছিল। ৯০+৩ মিনিটে ষোলো কলা পূরণ হয়। পেনাল্টি থেকে গোল করেন আলাদিন। চলতি ডুরান্ড কাপে আট গোল করে গোল্ডেন বল এবং বুটের মালিক আজারাই।
