আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে একাধিক রেকর্ড গড়ে ইতিহাস রচনা করলেন ভারতীয় স্পিনার কুলদীপ যাদব। রবিবার অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে দুরন্ত স্পেল উপহার দিলেন তিনি। ২৬.৫ ওভারে ৮২ রান দিয়ে তুলে নিলেন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এই নিয়ে টেস্টে পঞ্চম ফাইভ-ফার নিলেন কুলদীপ।

এদিনের ফাইভ উইকেট হল দিয়ে কুলদীপ হয়ে গেলেন সবচেয়ে দ্রুত পাঁচটি পাঁচ-উইকেট পাওয়া বাঁ-হাতি লেগ স্পিনার। পরিসংখ্যান বলছে, কুলদীপ এখন সমান জায়গায় রয়েছেন ইংল্যান্ডের জনি ওয়ার্ডলের সঙ্গে। ওয়ার্ডল যেখানে ২৮ টেস্টে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, সেখানে কুলদীপ তা করেছেন মাত্র ১৫ টেস্টেই। যা একেবারেই নজিরবিহীন।

বাঁ-হাতি লেগ স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত পাঁচটি ফাইভ-ফার (টেস্ট):

৫ – কুলদীপ যাদব (১৫ টেস্ট)

৫ – জনি ওয়ার্ডল (২৮ টেস্ট)

৪ – পল অ্যাডামস (৪৫ টেস্ট)

রবিবার কুলদীপের স্পিন জাদুতে প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৮১.৫ ওভারে অলআউট হওয়ার পর ভারত পায় বিশাল ২৭০ রানের লিড। এই লিড নিয়েই রোহিত শর্মা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলো-অন করানোর সিদ্ধান্ত নেন।

সকালের সেশনে কুলদীপের ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত হয় অতিথি দল। তিনি ধারাবাহিকভাবে ফিরিয়ে দেন শাই হোপ, টেভিন ইমলাচ ও জাস্টিন গ্রেভসকে, ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন-আপ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।

শেষদিকে খানিকটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন ক্যারি পিয়েরে ও অ্যান্ডারসন ফিলিপ, নবম উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়ে। তবে লাঞ্চের পরপরই যশপ্রীত বুমরা দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে পিয়েরে-র উইকেট ভেঙে দেন।

শেষ উইকেটের জুটিতে ফিলিপ ও জেডেন সিলস কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও কুলদীপের এক চমৎকার গুগলিতে আউট হন সিলস, এবং তাতেই কুলদীপের ফাইভ-ফার সম্পূর্ণ হয়।

ইনিংস হারের মুখে দাঁড়িয়ে দলকে রক্ষা করলেন ওপেনার জন ক্যাম্পবেল। তৃতীয় দিনের শেষে ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে ব্যাটিং করে তিনি প্রমাণ করলেন, লড়াই এখনও শেষ হয়নি।

তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহ-অধিনায়ক শাই হোপ (৬৬*), যিনি সমানতালে আক্রমণ ও সংযমের মিশেলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। দুই ব্যাটারের মধ্যে ১৩৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করে দু’উইকেটে ১৭৩ রানে।

ইনিংস হার এড়াতে এখনও ৯৭ রান প্রয়োজন। যদিও ভারতের জয় প্রায় নিশ্চিত, তবে ক্যাম্পবেল ও হোপের এই লড়াই দলের মনোবল নিঃসন্দেহে বাড়িয়ে দেবে ক্যারিবিয়ানদের নিউজিল্যান্ড সফরের আগে।

দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের শুরুটা ছিল বিপজ্জনক। চা-বিরতির আগে ৩৫ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেন জন ক্যাম্পবেল। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে রবীন্দ্র জাডেজা ও কুলদীপ যাদবের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন তিনি। উড়িয়ে মারেন দুটি ছক্কা ও নয়টি চার।

হোপও পিছিয়ে থাকেননি। তিনিও কুলদীপ ও ওয়াশিংটন সুন্দরকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখেন। ফলে ভারত অধিনায়ক শুভমান গিল বাধ্য হন ‘ইন-আউট’ ফিল্ড সেট করতে, যা ব্যাটারদের স্ট্রাইক রোটেট করে রানের গতি বজায় রাখা আরও সহজ করে দেয়।

পিচে এদিন মাঝে মাঝে বল নিচু হয়ে গেলেও ভাঙন তেমন ছিল না, ফলে ব্যাটিং তুলনামূলক সহজ ছিল। ক্যাম্পবেল-হোপ জুটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের শেষে কোনও উইকেট না হারিয়ে ম্যাচে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।