সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: কর্মসূত্রে থাকেন মুম্বইয়ে। কিন্তু মন পড়ে কলকাতায়। সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন কল্লোলিনীতে। কলকাতার ফুটবলের সমস্ত খবরাখবর নখদর্পণে। নিয়মিত আইএসএল দেখেন। আগামী মরশুমেই হয়তো পেশাদার কোচিংয়ে দেখা যাবে হোসে রামিরেজ ব্যারেটোকে। কে বলতে পারে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কলকাতা দিয়েই তাঁর যাত্রা শুরু হতে পারে। এত তাড়াতাড়ি পেশাদার কোচিংয়ে আসার ইচ্ছে ছিল না সবুজ মেরুন ভক্তদের নয়নের মণির। কিন্তু লক্ষ্য প্রো লাইসেন্স করা। তার আবেদন করতে হলে কোনও পেশাদার ক্লাবে কোচ হিসেবে যুক্ত থাকতে হবে। সেই কারণেই ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন ব্রাজিলীয় তারকা। ব্যারেটো বলেন, 'বেশ কয়েক বছর ধরে আমি অ্যাকাডেমির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে পেশাদার কোচিংয়ে আসতেই হবে। যদিও আমার এত তাড়াতাড়ি পেশাদার কোচ হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আমি প্রো লাইসেন্স করতে চাই। সেটার জন্যই আমাকে কোনও পেশাদার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। তাই ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিয়েছি।'
সেই কথা মাথায় রেখেই আবার কলকাতার সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়েছেন। সোমবার কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনের সুপার সিক্সের ম্যাচ দেখতে হাজির ছিলেন ব্যারেটো। তিনি মনে করেন, আগের তুলনায় লিগের মানের উন্নতি হয়েছে। ব্যারাকপুরের মাঠ দেখে অভিভূত। ব্যারেটো বলেন, 'আমাদের সময় যেসব মাঠে কলকাতা লিগের খেলা হত, সেই তুলনায় এখন মাঠ অনেক ভাল। পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। খেলার মানও যথেষ্ট ভাল। প্রিমিয়ার ডিভিশনের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য চোখে পড়ছে না।'
বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ চালু করতে চলেছে আইএফএ। বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান ব্যারেটো। তবে সবুজ তোতা মনে করেন, ঘরোয়া লিগের সময়সীমা, ম্যাচের সংখ্যা না বাড়ালে স্থানীয় ফুটবলারদের মানের উন্নতি হবে না। এই প্রসঙ্গে ব্যারেটো বলেন, 'আমাদের সময় বা তার আগে বাংলা থেকে ভাল স্ট্রাইকার, ডিফেন্ডার উঠে আসত। মাঝমাঠেও প্রচুর ভাল ফুটবলার ছিল। কিন্তু এখন আর সেটা দেখা যায় না। শৌভিক ছাড়া দুই প্রধানের মাঝমাঠে কোনও স্থানীয় ফুটবলার নেই। কলকাতার ফুটবলের মান বাড়াতে ম্যাচের সংখ্যা বাড়াতে হবে। শুধু ২০টা ম্যাচ খেললে হবে না। আমাদের সময় আইএফএ শিল্ড হত। ম্যাচের সংখ্যা না বাড়ালে ভবিষ্যতের প্রতিভা উঠে আসবে না।'
আইএসএলে টানা ব্যর্থতার পর এএফসিতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স ইস্টবেঙ্গলের। আধ ডজন হারের গ্লানি কাটিয়ে ১১ বছর পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে নক আউট পর্বে লাল হলুদ। ইস্টবেঙ্গল-নাজমে ম্যাচ দেখেননি। সেদিনই কলকাতায় আসেন। তবে এক বন্ধুর মোবাইলে ম্যাচের কিছু অংশ দেখেছেন। ব্যারেটো মনে করেন, অনেক সময় কোচ বদলে সাময়িক রেজাল্ট আসে। জানান, এই মঞ্চ কাজে লাগিয়ে এবার আইএসএলে ঘুরে দাঁড়ানো উচিত ইস্টবেঙ্গলের। ব্যারেটো বলেন, 'কার্লেস কুয়াদ্রাত ভাল কোচ ছিল। খুব তাড়াতাড়ি চলে যেতে হল। আরও কিছুদিন সময় পাওয়া উচিত ছিল। ওনার অধীনে ম্যাচ জেতা উচিত ছিল ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু কিছু ভুলত্রুটির জন্য শেষপর্যন্ত সেটা হয়নি। তবে নতুন কোচও ভাল করছে। অনেক সময় কোচ বদলালে রেজাল্ট আসে। এএফসির এই পারফরম্যান্স কাজে লাগিয়ে এবার আইএসএলে প্রত্যাবর্তন করা উচিত ইস্টবেঙ্গলের।' মোহনবাগানের শুরুটা ভাল না হলেও মিনি ডার্বি থেকে কামব্যাক করেছে। তারপর ডার্বি জয়। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জয়ের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করে সবুজ মেরুন ব্রিগেড। হোসে মোলিনার কোচিং স্টাইল পছন্দ ব্যারেটোর। চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে রাখছেন প্রিয় ক্লাবকে। ব্যারেটো বলেন, 'মোহনবাগান ভাল খেলছে। আগের মরশুমে হাবাস সাফল্য দিলেও, মোলিনার স্টাইল বেশি আকর্ষক। আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলান। দেখতে ভাল লাগে। ফুটবলাররাও ভাল।' আলাদা করে গ্রেগ স্টুয়ার্টের প্রশংসা করেন বাগানের চিরকালের হার্টথ্রব।
