আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনের প্রক্রিয়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ফিউচার হোস্ট কমিশনের সঙ্গে ‘কন্টিনিউয়াস ডায়ালগ’ বা ধারাবাহিক আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে লোকসভায় জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। আম আদমি পার্টির সাংসদ গুরমিত সিং মিট হায়ারের এক প্রশ্নের জবাবে মাণ্ডব্য জানান, গোটা নিলাম প্রক্রিয়াটি ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত ইতিমধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটিকে ‘লেটার অব ইন্টেন্ট’ জমা দিয়েছে। নিলামটি এখন অলিম্পিক ফিউচার হোস্ট কমিশনের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে’। তবে তিনি সাংসদ হায়ারের নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেননি। আম আদমি পার্টির সাংসদ জানতে চেয়েছিলেন, ভারত একাধিক শহরে ইভেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে কি না।

সাংসদ জানতে চেয়েছিলেন ভারতের প্রস্তাবে ভুবনেশ্বরে হকি, ভোপালে রোয়িং, পুনেতে ক্যানোয়িং/কায়াকিং এবং মুম্বইয়ে ক্রিকেটের আয়োজন রাখা হয়েছে কি না। মাণ্ডব্য বলেন, ‘ভারতে অলিম্পিক আয়োজনের নিলাম করা ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব এবং আয়োজক শহর বেছে নেওয়ার অধিকার ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির’। সাধারণত এই প্রক্রিয়া হোস্ট সিলেকশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যদিও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও আয়োজক শহরের নাম প্রস্তাব করেনি। গুজরাট সরকার এই প্রচেষ্টার অগ্রভাগে রয়েছে। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী হর্ষ সাঙ্ঘভি জুলাই মাসে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে লোজানে অলিম্পিক কমিটির সদর দপ্তরে গিয়ে নিলাম নিয়ে আলোচনা করেন।

‘কন্টিনিউয়াস ডায়ালগ’ পর্যায়ে আইওসি কোনও দেশের প্রস্তুতি যাচাই করে থাকে। তবে বর্তমানে আইওসির নতুন সভাপতি, অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী প্রাক্তন সাঁতারু এবং প্রথম আফ্রিকান ও মহিলা আইওসি প্রেসিডেন্ট কির্স্টি কভেন্ট্রি এই প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। কভেন্ট্রি গত জুনে নিজের প্রথম এক্সিকিউটিভ বোর্ড বৈঠকে জানান, সদস্যদের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ আয়োজক নির্বাচন প্রক্রিয়াটি পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। আগে ধারণা করা হয়েছিল ভারতের বিড নিয়ে আগামী বছর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে ভারতকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে কাতার ও তুরস্কের মতো দেশগুলির সঙ্গে। পাশাপাশি, ভারতের ডোপিং রেকর্ড নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইওসি।

বিষয়টি সমাধানে ভারতের অলিম্পিক কমিটি ইতিমধ্যেই একটি প্যানেল গঠন করেছে। প্রসঙ্গত, জুলাই মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের লোজানে তিনদিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে গিয়েছিল ভারতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। ২০২৩ সালে অলিম্পিক আয়োজনের আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার পর এই প্রথমবার ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অলিম্পিক কমিটির সদর দপ্তরে গেল। গুজরাটের ক্রীড়ামন্ত্রী হর্ষ সংঘভীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পি টি ঊষা, ক্রীড়া দপ্তরের সচিব হরিরঞ্জন রাও, গুজরাটের মুখ্য ক্রীড়া সচিব অশ্বিনী কুমার এবং আরবান সেক্রেটারি তেন্নারাসান। গুজরাটকেই ভারতের পক্ষ থেকে অলিম্পিক আয়োজনের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এই সফরে।

প্রসঙ্গত, নতুন নির্বাচিত অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট কির্স্টি কভেন্ট্রি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, অলিম্পিকের আয়োজক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আপাতত কিছুটা ‘পজ ও রিভিউ’ হয়েছে। যার ফলে সময়সীমা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও ভারতের উদ্যোগে তা প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সফরকালীন প্রতিনিধিদল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং ভারতের পক্ষ থেকে গুজরাটকেই অলিম্পিক আয়োজনের একটি সম্ভাব্য স্থান বলে তুলে ধরেছেন অলিম্পিক কমিটির কাছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে ভারতের প্রতিনিধি এবং উদ্যোক্তা নীতা আম্বানির নেতৃত্বে এই বিডকে সমর্থন করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। তিনি আগেই জানিয়েছেন, ‘আমরা ২০৩৬ অলিম্পিকের আয়োজক হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। এটা ভারতের খেলাধুলার ভবিষ্যতের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। অলিম্পিক যেখানে হয়, সেখানকার অর্থনীতি, পরিকাঠামো, ক্রীড়া সংস্কৃতি সবকিছুই একধাক্কায় উন্নত হয়’। ভারত এখনও পর্যন্ত একবারও অলিম্পিক আয়োজন করেনি। ফলে ২০৩৬ সালে গেমস আয়োজনের এই প্রচেষ্টা দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।