আজকাল ওয়েবডেস্ক: বোনের হাত ছুঁয়ে ছলছল চোখে শপথ নিয়েছিল ছেলেটা। গলায় আবেগের বাষ্প জড়িয়ে বোনকে বলেছিল, ''দেখবি, তোর ভাই আবার ফুটবল খেলবে।'' 

দু' জন চিকিৎসক জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। বলে দিয়েছিলেন, ''ফুটবল আর খেলতে পারবে না।'' তৃতীয় চিকিৎসক বলেছিলেন, ''ব্যাডমিন্টন-টেনিস খেলতে পারো।'' সেই চিকিৎসকও কিন্তু ফুটবলের কথা বলেননি। 

যাঁকে নিয়ে এত দ্বিধা দ্বন্দ্ব, এত প্রশ্ন, সেই এডমুন্ড লালরিনডিকা ফুটবলের মূলস্রোতে ফিরেছেন। রেকর্ড অর্থ ট্রান্সফার ফি দিয়ে ইন্টার কাশী থেকে ইস্টবেঙ্গলে এসেছেন তিনি। তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর প্রত্যাবর্তনের রাস্তায় ফুলের পাপড়ি বিছানো ছিল না। বরং তা ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারের ১৮ মাস পরে মাঠে ফেরেন এডমুন্ড। এই আঠেরো মাস তাঁকে ইস্পাত কঠিন করে তোলে। 

বেঙ্গালুরু এফসি তাঁর সঙ্গে চুক্তি ছিন্ন করে। কিন্তু হাল ছাড়েনি এডমুন্ড। ইন্টার কাশীতে লালরিনডিকা নতুন করে নিজের জাত চেনান। আই লিগের দল থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পান। একটি সর্বভারতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লালরনিডিকা বলেন, ''অস্ত্রোপচারের আগে সবাই খুব টেনশনে ছিল। চিকিৎসকরা কী বলেছে সবাই তা জানত। আমার বোনকে বলেছিলাম, তোর ভাই আবার ফুটবল খেলবে।'' 

Edmund Lalrindika | The comeback kid ????????‍♂️ #FaithOnly ...

২০২১-২২ মরশুমে চোট নিয়ে টানা খেলে গিয়েছেন এডমুন্ড। তিনি নিজে বলছেন, ''আমার বিশ্রাম নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমি খেলে গিয়েছি। ভেবেছিলাম বেঙ্গালুরুর মূল দলে আমি জায়গা পাব।''

জটিল অস্ত্রোপচারের পরে চার মাস বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন এডমুন্ড। অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতেন। এর পরে একটু একটু করে হাঁটা শুরু করেন। প্রথমদিকে ভাল করে জগিং করতে পারতেন না। কিন্তু এডমুন্ড হেরে যাননি। তিনি লড়াই চালিয়ে যান। এডমুন্ড বলেন, ''বেঙ্গালুরু চুক্তি কেন ছিন্ন করেছিল তা বুঝতে পারি। তবে আমি ক্লাবকে ধন্যবাদ জানাই। বেঙ্গালুরুর হয়ে বেশি সুযোগ পাইনি। কারণ বড় ক্লাব। আর আমার বয়স কম ছিল। তবে ওরা আমাকে সেরা রিহ্যাব, সেরা চিকিৎসক দিয়েছিল।'' 

ইন্টার কাশীতে গিয়ে পুনর্জাগরণ হয় এডমুন্ড লালরিনডিকার। তিনি বলছেন, ''ফুটবলে চোটআঘাত রয়েছে। ফুটবলার হিসেবে এই ধরনের খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যখন যেতে হয়, তখন মানসিক দিক থেকে কঠিন হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট ফুটবলার।  আমার মানসিকতাও এখন কঠিন। ঈশ্বরের উপরে আমার আস্থা রয়েছে। আমি এখন সবকিছুর মোকাবিলা করতে পারি।'' 

মাত্র ১৭ মিনিটের এক ডার্বি ম্যাচ এডমুন্ড লালরিনডিকাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে। আবার তিনি ফিরছেন তাঁর পুরনো ক্লাবে। এডমুন্ড বলছেন, ''ইস্টবেঙ্গলে আমি নতুন নই। আমি ইস্টবেঙ্গলে আগেও খেলেছি। চোট পেয়েছিলাম। আমি ফিরে আসতে চেয়েছিলাম ইস্টবেঙ্গলে। কারণ দেশের অন্যতম বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল।'' এডমুন্ড লালরিনডিকার গল্প বাকিদের মেরুদণ্ড শক্ত করার মতোই।