আজকাল ওয়েবডেস্ক: লড়াইটা শুরু হয়েছিল অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কাজের পর সিমেন্টের উইকেটে খেলা দিয়ে। আজ সেই লড়াইটাই তাঁদের নিয়ে এসেছে এশিয়া কাপে। দলটার নাম ওমান। দলের অধিনায়ক জতিন্দর সিংহ আর অলরাউন্ডার সুফিয়ান মাহমুদ শুধু দলেরই নয়, গোটা দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছেন। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জতিন্দর জানালেন, ‘যখন আমরা শুরু করেছিলাম, তখন মূল লক্ষ্য ছিল একটা চাকরি পাওয়া, ক্রিকেট ছিল গৌণ। কিন্তু আজ এশিয়া কাপে ওমানকে প্রতিনিধিত্ব করা আমাদের কাছে স্বপ্নপূরণ’। অভিনব ক্রিকেটযাত্রার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ‘প্রথমে আমাদের টার্ফ পিচই ছিল না। সিমেন্ট উইকেট থেকে শুরু করে ২০০৮ সালে আমরা প্রথম অ্যাস্ট্রোটার্ফ পেলাম। তারপর ২০১১ সালে পেলাম প্রথম টার্ফ গ্রাউন্ড। অনেক সময় ভেবেছি, এত পরিশ্রম করছি কেন? কিন্তু খেলার প্রতি খিদে আর আবেগই আমাদের আটকে রেখেছে।’
জানা গেল, এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে অনেক প্রতিভাই ক্রিকেট ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু জতিন্দর আর সুফিয়ানের মতো ক্রিকেটপ্রেমীরা থেকে গিয়েছিলেন, লড়াই চালিয়ে গেছেন। তার ফলও এখন মিলছে হাতেনাতে। ৩৬ বছর বয়সি জতিন্দরের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত রয়েছে ৩৬টি ওয়ানডেতে ১৭০৪ রান, চারটি শতরান এবং সর্বোচ্চ ১১৮ নট আউট। টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ১১২০ রান, স্ট্রাইক রেট ১১৫-এর ওপরে। অন্যদিকে, ৩৪ বছর বয়সি সুফিয়ান আট ওয়ানডেতে ১০৭ রান করেছেন, সর্বোচ্চ ৭২, সঙ্গে নিয়েছেন ৬ উইকেট। তবে সুফিয়ানের লড়াইটা শুরু হয়েছিল ঘরের ভিতর থেকেই। তিনি জানান, ‘জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর বাবা-মা বলেছিলেন, ওমানে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নেই, পড়াশোনা আর চাকরির দিকে মন দাও। কিন্তু বিশ্বাস ছিল নিজের ওপর। ২০১৬ বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার পর মনে হয়েছিল পরিশ্রম সার্থক হল।’
২০১৫ সালে নামিবিয়াকে হারিয়ে ওমান প্রথমবার পায় টি-টোয়েন্টি খেলিয়ে দেশের মর্যাদা। ২০১৬ বিশ্বকাপে তাঁদের ঐতিহাসিক আত্মপ্রকাশে প্রথম ম্যাচেই ওমান হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ডকে। সেই আসরই হয়ে উঠেছিল টার্নিং পয়েন্ট। জতিন্দরের ভাষায়, ‘২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকেই যাত্রা নতুন মোড় নেয়। শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, কোচিং—সব কিছু বদলে যায়। খেলোয়াড়রা খেলা উপভোগ করতে শুরু করে। ২০২৫ সালে এসে আমাদের দল আরও ক্ষুধার্ত।’ এবারের এশিয়া কাপে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন। ভারত, পাকিস্তান আর সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে একই গ্রুপে পড়েছে ওমান। জতিন্দর বলেন, ‘আমরা ভয়ের তোয়াক্কা না করেই খেলব। অন্তত বুঝতে পারব আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে। বড় দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ খুব কমই আসে। এ এক সোনার সুযোগ’। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটাকেই এশিয়া কাপে সবচেয়ে বড় মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
জতিন্দরের অনুপ্রেরণার তালিকায় আছেন শুভমন গিল, সূর্যকুমার যাদব, অভিষেক শর্মা, অর্শদীপ সিং, তিলক ভার্মা। সুফিয়ান অবশ্য মুগ্ধ হার্দিক পাণ্ডিয়ার প্রতি। তিনি বলেন, ‘হার্দিক ব্যাটিং-বোলিং দুটো দিকই যেভাবে সামলান, তা অসাধারণ। তবে সত্যি বলতে, গোটা ভারতীয় দলের কাছ থেকেই শিখতে চাই, তারা কীভাবে প্রস্তুতি নেয়, চাপ সামলায়। প্রতিটা মুহূর্তই শেখার।’ এশিয়া কাপের বাইরেও ওমান ক্রিকেট নজর দিচ্ছে ভবিষ্যৎ গড়ায়। উপ-প্রধান কোচ সুলক্ষ্মণ কুলকার্নির নেতৃত্বে স্কুলস্তরে ক্রিকেটের প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ফুটবলপ্রধান দেশে ক্রিকেটের চাহিদা তৈরি করাই এখন বড় লক্ষ্য। জতিন্দরের কথায়, ‘ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে সময়, পরিশ্রম আর অবকাঠামো দরকার। তবে কাজ চলছে। একাডেমির কোচরা স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের শেখাচ্ছেন, ছোট থেকেই প্রতিভা গড়ে তোলা হচ্ছে। লক্ষ্য হল এমন একটি পাইপলাইন তৈরি করা, যা ভবিষ্যতে ওমান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
