ইস্টবেঙ্গল - ০
বেঙ্গালুরু এফসি - ১ (বিনীত)
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নতুন মরশুমে শক্তিশালী দল করলেও, ভাগ্য ফিরল না। ছন্দে ফিরল না ইস্টবেঙ্গল। সেই 'থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর।' হার দিয়ে শুরু হল আইএসএল। শনিবাসরীয় রাতে কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বেঙ্গালুরু এফসির কাছে ০-১ গোলে হারল ইস্টবেঙ্গল। দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিল বিনীত ভেঙ্কটেশের গোল। শত চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি লাল হলুদ। দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোস, ক্লেইটন সিলভা, মাদি তালাল, সল ক্রেসপো, নাওরেম মহেশ, নন্দকুমারের মতো অ্যাটাকিং ফুটবলাররা থাকা সত্ত্বেও আইএসএলের প্রথম ম্যাচে গোলের খাতা খুলতে ব্যর্থ লাল হলুদ। স্কোরশিটে মাত্র এক গোল থাকলেও, নাটকীয় ৯০ মিনিট। হাইভোল্টেজ ম্যাচে কার্ডের ছড়াছড়ি। ৮৭ মিনিটে লালকার্ড (দ্বিতীয় হলুদ) দেখে মাঠ ছাড়েন চুংনুঙ্গা। শেষ কয়েক মিনিট দশজনে খেলতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। শেষপর্যন্ত হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হল কার্লেস কুয়াদ্রাতকে। ম্যাচটা দুই অর্ধে ভাগ করলে, প্রথমার্ধ বেঙ্গালুরুর, দ্বিতীয়ার্ধ ইস্টবেঙ্গলের। বিরতির পর আগ্রাসী ফুটবল খেলে কলকাতার প্রধান। অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া উচিত ছিল। বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু তেকাঠিতে বল রাখতে পারেনি।
আনোয়ারের অনুপস্থিতিতে শুরুতে দুই বিদেশি ডিফেন্ডার হিজাজি এবং ইউস্তেকে রেখে শুরু করেন কুয়াদ্রাত। প্রথম একাদশে রাখা হয়নি মাদি তালাল এবং ক্লেইটন সিলভাকে। সামনে একা ডিয়ামানটাকোসকে রেখে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে শুরু করেন কুয়াদ্রাত। শুরু থেকেই ফিজিক্যাল ফুটবল খেলে লাল হলুদ। প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই চারটে হলুদ কার্ড দেখে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে প্রথম থেকে কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তবে প্রথমার্ধের শেষে খেলার নিরিখে এগিয়ে ছিল বেঙ্গালুরু। যদিও ম্যাচে প্রথম সুযোগ ছিল কলকাতার প্রধানের। ১১ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগ ইস্টবেঙ্গলের। জিকসন সিংয়ের দূরপাল্লার শট বাঁচান গুরপ্রীত। এদিন লাল হলুদ জার্সিতে অভিষেক হয় জিকসনের। তার কয়েক মিনিটের মধ্যে গোলের সুযোগ ছিল বেঙ্গালুরুর সামনেও। মেন্ডেসের দূরপাল্লার শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের ২৬ মিনিটে বেঙ্গালুরুকে এগিয়ে দেন বিনীত ভেঙ্কটেশ। বক্সের মাথায় মেন্ডেসের থেকে বল পেয়ে ডান পায়ের গড়ানো শটে দ্বিতীয় পোস্টে রাখেন তরুণ উইঙ্গার। আইএসএলে অভিষেক ম্যাচেই গোল। বেঙ্গালুরুর হয়ে আইএসএলে কনিষ্ঠতম গোলদাতা। কলকাতায় ডুরান্ড কাপে নজর কেড়েছিলেন বিনীত। গতি এবং দক্ষতা দুটোই রয়েছে। এদিন রেকর্ডবুকে নাম তুললেন বেঙ্গালুরুর অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা ফুটবলার।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ ছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। কিন্তু চুংনুঙ্গার থেকে ফাঁকায় বল পেয়েও বক্সের ওপর দিতে উড়িয়ে দেন শৌভিক। বিরতির ঠিক আগে সুযোগ নষ্ট করেন নন্দকুমার।
প্রথমার্ধে অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ ফুটবল খেলে বেঙ্গালুরু। মাঝমাঠ তাঁদের দখলে ছিল। এদিন শুরু থেকেই সুনীল ছেত্রীকে নামান বেঙ্গালুরু কোচ। কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসেও গোলের জন্য ছটফট করছিলেন তারকা ফুটবলার। বিরতির ঠিক আগে তাঁর শট বাইরে যায়। রেফারিং নিয়ে আগে থেকেই চিন্তিত ছিলেন কুয়াদ্রাত। এদিন বিরতিতে ক্রিস্টাল জনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। লাল হলুদের মাঝমাঠ খুব একটা কার্যকরী না হওয়ায় সেইভাবে বলই পায়নি ডিয়ামানটাকোস। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে তাঁর পরিবর্তে মাদি তালালকে নামান কুয়াদ্রাত। তার কয়েক মিনিট আগে গোল লক্ষ্য করে নন্দকুমারের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচায় গুরপ্রীত। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত বেঙ্গালুরু। কিন্তু অফসাইডের জন্য পেরেরা ডিয়াজের গোল বাতিল হয়ে যায়।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে একসঙ্গে তিনটে পরিবর্তন করেন কুয়াদ্রাত। নামান আমন, বিষ্ণু এবং ক্লেইটনকে। কিন্তু তাতেও রেজাল্ট বদলায়নি। ৮৫ মিনিটে সিটার নষ্ট ক্লেইটনের। শেষদিকে গোদের ওপর বিষফোঁড়া দ্বিতীয় হলুদ, অর্থাৎ লালকার্ড দেখে চুংনুঙ্গার মাঠ ছাড়া। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে পরিবর্ত ফুটবলার উইলিয়ামসকে ধাক্কা মারেন লাল হলুদের ডিফেন্ডার। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কার্ড দেখেন ক্লেইটনও। সবমিলিয়ে দিনটা ইস্টবেঙ্গলের ছিল না। পুরোনো দলের কাছে প্রথম ম্যাচেই হেরে যথারীতি হতাশ লাল হলুদের স্প্যানিশ কোচ। কুয়াদ্রাত বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। আমরা লড়াই করেছি। সুযোগ তৈরি করেছি। কিন্তু গোল করতে পারিনি। ক্লেইটনের গোলটা হওয়া উচিত ছিল।' ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে।
