ইস্টবেঙ্গল - ১ (আনোয়ার)

ডায়মন্ড হারবার - ২ (মিখেল, জবি)

সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: কাটল না ময়দানি মিথ। ডার্বির পরের ম্যাচ হেরে ডুরান্ড কাপ থেকে বিদায় নিল ইস্টবেঙ্গল। বাংলার পতাকা এবার ডায়মন্ড হারবরের হাতে। বুধবার রাতে সেমিফাইনালে কিবু ভিকুনার দলের কাছে ১-২ গোলে হার ইস্টবেঙ্গলের। মাত্র চার বছরেই বাজিমাত। শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবকে ধুলোয় মিশিয়ে দিল। প্রথম ডুরান্ড অভিযানেই ফাইনালে ডায়মন্ড হারবার। ম্যাচের নায়ক সেই জবি জাস্টিন। তাঁর গোলেই ইস্টবেঙ্গল কাঁটা তুললেন কিবু। আগের দিন জবি বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলকে সম্মান করেন। কিন্তু ভাল গোল করলে সেলিব্রেট করবেন। তবে এদিন প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে গোল করে কোনও উৎসবে মাতেননি। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। ডায়মন্ড হারবারের অন্য গোলটি করেন মিখেল কোর্তাজার। ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র গোল আনোয়ার আলির। মোহনবাগানের হারের বদলা নিলেন সবুজ মেরুনের প্রাক্তন আই লিগ জয়ী কোচ কিবু ভিকুনা। শনিবার ফাইনালে নর্থ ইস্ট ইনাইটেডের মুখোমুখি ডায়মন্ড হারবার। ভাগ্যের কি পরিহাস! মঙ্গল রাতে নর্থ ইস্টকে জেতান শিলং লজিংয়ের প্রাক্তনী রিদিম তালাং। ২৪ ঘণ্টা পর আরও এক প্রাক্তনী জবি জাস্টিন নায়ক। তবে আরেকজনের নাম উল্লেখ না করলে ম্যাচ রিপোর্ট সম্পূর্ণ হবে না। তিনি মিরশাদ মিচু‌। একাধিকবার দলের পতন রোখেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন গোলকিপার। কিবুর দলের ফাইনালে ওঠার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। 

এদিন কিছু হারানোর ছিল না ডায়মন্ড হারবারের। তাই প্রথম থেকেই তেড়েফুঁড়ে শুরু করে কিবুর দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধ পুরোপুরি ইস্টবেঙ্গলের। একাধিক সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল। ডার্বিতে শুরু থেকে যে তাগিদটা ছিল ইস্টবেঙ্গলের, সেমিফাইনালে সেটা চোখে পড়েনি। বরং, একটা গাছাড়া মনোভাব ছিল শুরুতে। চারদিনের মধ্যে দুটো ম্যাচ। তাই ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। প্রথমার্ধে যে ফুটবল আশা করা হয়েছিল, সেটা উপহার দিতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ডার্বি হিরো এদিন ফ্লপ। একাই হ্যাটট্রিকের সুযোগ মিস করেন ডিয়ামানটাকোস। তবে কিবু ভিকুনার প্রশংসা করতেই হবে। দুই স্প্যানিয়ার্ডের মহজাস্ত্রে প্রথম ৪৫ মিনিট অস্কারকে টেক্কা দেন। দারুণ রক্ষণ সংগঠন। কয়েকদিন আগেই যুবভারতীতে মোহনবাগানের কাছে পাঁচ গোল হজম করে ডায়মন্ড হারবার। অনেকে ভেবেছিলেন, ডার্বির পর ম্যাচটা তুলনায় সহজ হবে। কিন্তু বিরতির আগে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য উনিশ-বিশ। প্রথমার্ধ গোলশূন্য। বরং, দুই দলেরই গোল লক্ষ্য করে শট সমানে সমানে। প্রথম সুযোগ ডায়মন্ড হারবারের। ম্যাচের ৮ মিনিটের পলের শট তালুবন্দি করেন প্রভসুখন গিল। 

প্রথমার্ধে গোলের নীচে অনবদ্য ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী। খান তিনেক গোল বাঁচান মিরশাদ। ম্যাচের ১৫ মিনিটে প্রথম সুযোগ ইস্টবেঙ্গলের। মহেশের পাস থেকে বাইরে মারেন মিগুয়েল। তার সাত মিনিট পর আনোয়ারের শট আবার বাঁচান মিরশাদ। গোলের সুযোগ পায় ডায়মন্ড হারবারও। ম্যাচের ২৪ মিনিটে স্যামুয়েলের শট ক্রসপিসে লাগে। ৩৬ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে যান লুকা। কিন্তু পোস্টের ওপর দিয়ে ভাসিয়ে দেন। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের সেরা সুযোগ ইনজুরি সময়। জোড়া সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৪৭ মিনিটে মহেশের শট বাঁচায় মিরশাদ। তাঁর হাতে লেগে বল পোস্টে লাগে। ডিয়ামানটাকোসের ফিরতি শট বিপক্ষের পায়ের জঙ্গলে আটকে যায়। 

প্রথমার্ধে বিপিনকেন্দ্রিক যাবতীয় আক্রমণ হচ্ছিল। বিরতির পর অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যায়। আক্রমণের ঝড় ওঠে। জিকসন সিং এবং প্রভাত লাকরাকে নামান অস্কার। বিপিনকে পাঠিয়ে দেন ডানদিকে। মাঝমাঠ থেকে বাঁ দিকে চলে যান মহেশ। প্রথমার্ধের শুরুতে জোড়া সুযোগ দিমিত্রির। ৫০ মিনিটে তাঁর বাঁ পায়ের শট বাইরে যায়। তার ছ'মিনিট পর নিশ্চিত সিটার মিস গ্রিক স্ট্রাইকারের।‌ তাঁর হেড বাইরে যায়। এক মিনিটের মধ্যে বদলে যায় ম্যাচের রং। দুরন্ত গোল মিখেল কোর্তাজারের‌। বাইসাইকেল কিকে ডায়মন্ড হারবারকে এগিয়ে দেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। তবে এক মিনিটও লিড ধরে রাখতে পারেনি। পরের মুহূর্তেই ৬৭ মিনিটে দূরপাল্লার শটে ১-১ করেন আনোয়ার। দুই দলের দুই ডিফেন্ডারের গোলে ম্যাচ জমে যায়। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের কাঁটা সেই প্রাক্তনী। লাল হলুদের স্বপ্নভঙ্গ করেন জবি জাস্টিন। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ২-১। লুকার শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। ফিরতি বলে গোল জবির।‌ শেষলগ্নে লুকার গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এদিনই সকালে কলকাতায় ফেরেন মহম্মদ রশিদ। ৭৩ মিনিটে সল ক্রেসপোর পরিবর্তে তাঁকে নামান অস্কার। কিন্তু লাভ হয়নি। গোলের একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু অনবদ্য মিরশাদ। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ রশিদের। মাঠ ছাড়ার সময় জলের ড্রাম উল্টে দেন।