ইস্টবেঙ্গল - ৩ (আবদুলাই-আত্মঘাতী, ডিয়ামানটাকোস-২)

নেজমা এসসি - ২ (ওপারে, মঞ্জের)

আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্কার ব্রুজোর হাত ধরে সাফল্যের সরণিতে ফিরল ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলের ব্যর্থতা ঘুঁচিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এল সাফল্য। গ্রুপের একনম্বর দল হিসেবে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল কলকাতায় প্রধান। শুক্রবার থিম্পুতে নেজমা এসসিকে ৩-২ গোলে হারাল লাল হলুদ। জোড়া গোল দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোসের। অন্য গোলটি আত্মঘাতী। দীপাবলীর পরের দিনই সমর্থকদের জয় উপহার দিলেন গ্রিক স্ট্রাইকার। ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিল শীর্ষে থেকেই শেষ আট নিশ্চিত করল ভারতের ক্লাব। ১১ বছর পর এএফসির নকআউট পর্বে ইস্টবেঙ্গল। ঘরের মাঠে টানা ব্যর্থতা। আইএসএলে হাফ ডজন হার। টানা আট। সেই দলের থেকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বড় সাফল্য কেউই আশা করেনি। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরালেন অস্কার। পারোর সঙ্গে ড্র করার পর বসুন্ধরা, নেজমার বিরুদ্ধে জয়। তবে এদিন যে খুব ভাল খেলেছে ইস্টবেঙ্গল তেমন নয়। প্রথম ১৫ মিনিট এবং শেষদিকের কিছু মিনিট বাদ দিলে আধিপত্য ছিল লেবাননের ক্লাবের। তবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে, অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচ বের করে ইস্টবেঙ্গল। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনার পর ক্লাবের পাশাপাশি দেশের পতাকা নিয়ে সেলিব্রেট করতে দেখা গেল লাল হলুদের ফুটবলারদের। নতুন কোচকে ঘিরেও চলে উচ্ছ্বাস। 

ডু অর ডাই ম্যাচ ছিল ইস্টবেঙ্গলের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই সেরা দলের সরাসরি শেষ আটের ছাড়পত্র সংগ্রহ করার সুযোগ ছিল। তাই প্রেসিং ফুটবল দিয়েই শুরু করে লাল হলুদ। দলে কোনও পরিবর্তন করেননি অস্কার ব্রুজো। উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখেন। তবে ফরমেশন একটু বদলান। ৪-২-৩-১ ছকে শুরু করেন। আত্মঘাতী গোলে শুরুতেই এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ৮ মিনিটে মাদি তালালের কর্নার থেকে আবদুলাইয়ের হেড গোলে ঢুকে যায়। তার সাত মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান বাড়ায় কলকাতার প্রধান। লাল হলুদ জার্সিতে আরও একটি গোল তুলে নেন দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোস। ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় মহেশের পাস থেকে ২-০ করেন গ্রিক তারকা।

শক্তিশালী নেজমার বিরুদ্ধে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই জোড়া গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তারপরই ছন্দপতন। ম্যাচের দখল নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় লেবাননের ক্লাব। বল পজেশন থেকে শুরু করে আক্রমণ, সবেতেই এগিয়ে ছিল নেজমা‌। ম্যাচের ১৮ মিনিটে ব্যবধান কমায়। মাঝমাঠ থেকে লং বল পেয়ে ডান পায়ের শটে ২-১ করেন কলিন্স ওপারে। গতি দিয়ে পরাস্ত করেন ইউস্তেকে। জোড়া গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর কিছুটা খোলসের মধ্যে ঢুকে যায় ইস্টবেঙ্গল। তারই ফায়দা তোলে প্রতিপক্ষ।

ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনেও। ম্যাচের ২৩ মিনিটে মহেশের শট বাইরে যায়। তার চার মিনিট পর জোড়া সুযোগ মিস। প্রথমে ডিয়ামানটাকোস, তারপর মাদি তালাল। বাঁ পায়ের শটে বল ক্রসপিসের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ফরাসি প্লেমেকার। প্রথমার্ধে দুটো গোল এবং দুটো বিক্ষিপ্ত সুযোগ ছাড়া বিশেষ কিছু ছিল না ইস্টবেঙ্গলের খেলায়। বসুন্ধরার বিরুদ্ধে লাল হলুদের দুই উইং কার্যকরী ছিল। বিশেষ করে বাঁ প্রান্তে নন্দকুমার। কিন্তু এদিন ইস্টবেঙ্গলের উইং প্লে তেমনভাবে চোখে পড়েনি। মিডল করিডোর দিয়েই আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে। ম্যাচের শুরুতে নেজমাকে সংগঠিত না দেখালেও, খেলার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ২-২ করে নেজমা। দুরন্ত ফ্রিকিকে গোল করেন হুসেন মঞ্জার। দর্শকের ভূমিকা নেন প্রভসুখন গিল। কিছু করার ছিল না ইস্টবেঙ্গল কিপারের। বিরতির পরও আধিপত্য ছিল নেজমার‌‌। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল লেবাননের ক্লাবের সামনে। কিন্তু সিটার মিস করেন কৌরানি। দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক সুযোগ নষ্ট ইসমাইলদের। যার খেসারত দিতে হল। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে খেলার গতির বিরুদ্ধে গিয়ে পেনাল্টি থেকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে জয়সূচক গোল করেন ডিয়ামানটাকোস। তার আগে নন্দকুমার ওপেন সিটার মিস না করলে আগেই খেলার ভাগ্য গড়ে যেত। শেষদিকে ব্যবধান বাড়ানোর জোড়া সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ক্লেইটন‌ সিলভারা।