আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলার জুনিয়র দলের হয়ে নতুন রেকর্ড চন্দ্রহাস দাসের। যেভাবে কোচবিহার ট্রফিতে বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়ক শতরান হাঁকালেন, তাতে উচ্ছ্বসিত সৌরশিস লাহিড়ী। মাঠে নামলেই সেঞ্চুরি করছেন। সোমবার কল্যাণীতে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন চন্দ্রহাস। কোচবিহার ট্রফিতে বাংলার ব্যাটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বাধিক রানের ইনিংস খেললেন। অসমের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তিনে নেমে ১৭২ বলে ১২৪ রান করেছিলেন নিউ টাউনের বাসিন্দা চন্দ্রহাস। সেই ইনিংসে ছিল ১৭টি চার এবং তিনটি ছয়। রবিবার চণ্ডীগড়়ের বিরুদ্ধে দ্বিশতরান হাঁকানোর পরের দিনই চন্দ্রহাস থামলেন ৩১৯ বলে ৩৩২ রানের ইনিংসে। মেরেছেন ৫৩টি চার এবং ১০টি ছয়। ঐতিহাসিক ইনিংস খেলার পর চন্দ্রহাস বলেন, 'সুযোগ কাজে লাগাতে পেরে খুব ভাল লাগছে। কোনও টার্গেট ছিল না। বল অনুযায়ী খেলে গিয়েছি। লুজ বল পেতেই শট খেলেছি। তাতেই মাইলস্টোন ছুঁলাম। তবে আগামী ইনিংসেও নতুনভাবে শুরু করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।' অসমের পর চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধেও ইনিংস জয়ের অপেক্ষায় বাংলা। দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী চন্দ্রহাস। বললেন, 'সবাই পারফর্ম করছে। বন্ডিং খুব ভাল। দলগতভাবে আমরা খেলছি। ভাল জায়গায় আছি। সরাসরি জয়ের লক্ষ্যেই যাব। আগেরবার আমরা ভাল খেললেও ট্রফি জিততে পারিনি। এবার কোচবিহার ট্রফি জেতাই লক্ষ্য।'
৮ বছর বয়সে খেলা শুরু চন্দ্রহাসের। বাবা সৌমেন্দ্র প্রসাদ দাশের হাত ধরে ভর্তি হন করুণাময়ীর ২২ ইয়ার্ডস স্পোর্টস স্কুলে। ত্রিশতরান হাঁকিয়ে সেই আকাদেমির কাঞ্চন স্যার থেকে শুরু করে রাজীব গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা মনে পড়ছে চন্দ্রহাসের। নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন সৌরাশিস লাহিড়ী, সঞ্জীব সান্যালদের পরামর্শ মেনে চলে। ৯ বছর বয়সেই সিএবি পরিচালিত টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ মেলে। অনূর্ধ্ব-১৩ বিভাগে অধিনায়কত্ব করার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও স্বাদ পেয়েছেন। কোভিডকাল পার করার পর সিএবির অনূর্ধ্ব-১৬ শিবিরে তাঁর কেরিয়ার ইতিবাচক মোড় নেয়। দু'বছর দ্বিতীয় ডিভিশনে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের হয়ে খেলার পর প্রথম ডিভিশনে খেলেছেন বালিগঞ্জ ইউনাইটেডের হয়ে। এখন খেলছেন বড়িশায়। বিরাট কোহলির ভক্ত চন্দ্রহাস সুযোগ পেতে চান ভারতীয় দলে। সিএবি যেভাবে তাঁকে কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে, তাতে কৃতজ্ঞ চন্দ্রহাস।
বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হেড কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী জানিয়ে দিলেন, চন্দ্রহাসের ঐতিহাসিক ইনিংসের সাক্ষী থাকতে পেরে আপ্লুত। সৌরাশিসের বলেন, 'আমি দু'বছর ধরে চন্দ্রহাসকে দেখছি। অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। খুব পরিশ্রমী, ফিট। কঠোর পরিশ্রমেরই সুফল পাচ্ছে। অনূর্ধ্ব-১৯ ব্যাটার ত্রিশতরান হাঁকাচ্ছে এটা সচরাচর দেখা যায় না। আরও ম্যাচ আছে। আরও রান করবে। চন্দ্রহাসের সামনে গ্রেট কেরিয়ার অপেক্ষা করছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা আছে। বাংলার হয়েও দীর্ঘদিন খেলতে পারবে চন্দ্রহাস।'
সৌরাশিস জানান, গত বছরের তুলনায় খেলা অনেক বদলেছে চন্দ্রহাসের। সৌরাশিস বলেন, 'টেকনিক্যাল কিছু পরিবর্তন এনেছে ব্যাটিংয়ে। মানসিকভাবে অনেক বেশি রিল্যাক্সড থাকছে । উপভোগ করছে। আগে ও নিজেকে চাপে ফেলে দিত। কিন্তু এবার প্রক্রিয়ায় জোর দিচ্ছে, ফল নিয়ে ভাবছে না। তাতেই ব্যাটিং উপভোগ করছে। ফুটওয়ার্ক ভাল হয়েছে। পায়ের নড়াচড়া খুব ভাল। শট খেলতেও দ্বিধায় থাকছে না। বোলারদের উপর দাপট দেখাচ্ছে।' মঙ্গলবার কোচবিহার ট্রফিতে সরাসরি জয়ের লক্ষ্যে নামবে বাংলার জুনিয়ররা।
