আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক শতাব্দী ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার পর লাল বলের ক্রিকেটে সবচেয়ে জঘন্য পারফরম্যান্সের দৃষ্টান্ত রাখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় তথা শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট কিশোর শ্যালো। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের হারিয়ে যাওয়া জৌলুশ পুনরুদ্ধারে ফিরে যাচ্ছেন অতীতে। দুই ক্যারিবিয়ান গ্রেট ভিভ রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারাকে দলের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছেন তিনি। ব্যাটিং ব্যর্থতা যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। ২০২২-২৩ থেকে কোনও টেস্ট সিরিজ জেতেনি। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে জয়ই শেষ সিরিজ জয়। তারপর থেকে তিনটে সিরিজ ড্র হয়েছে, পাঁচটা হেরেছে। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০-৩ এ ওয়াইটওয়াশ।
ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পেসিডেন্ট শ্যালো একটি বিবৃতিতে জানান, 'এই রেজাল্ট প্রচণ্ড আঘাত করছে। আমরা যেভাবে হেরেছি শুধু সেই জন্য নয়, আমাদের ক্রিকেট সবসময় গর্ব ছিল। আমাদের পরিচয় ছিল। ক্রিকেট নিয়ে বরাবর আশা ছিল। এই বেহাল দশা আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে প্লেয়াররাও রয়েছে। ওরাও এই হার মেনে নিতে পারছে না। আমরা নতুন করে দল গড়ে তোলার পর্যায় আছি। আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে এগোচ্ছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট একসময় সেরা ছিল। সেই দিনগুলি ফিরিয়ে আনতে চাই।'
সত্যিই সাতের দশকে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট একনম্বরে ছিল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অ্যাখ্যা দখল করে। আটের দশকেও সেটা বজায় থাকে। ভিভ রিচার্ডসের সময় বিশ্বক্রিকেট শাসন করত ক্যারিবিয়ানরা। তারপর কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোজের মতো বোলাররা আসে। পুরোনো ছন্দ ফিরে পেতে এবার প্রাক্তনীদের দ্বারস্থ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পারফরম্যান্স রিভিউ করতে ইমার্জেন্সী বৈঠক ডাকা হয়েছে। বিশেষ করে শেষ টেস্ট নিয়ে। বোলিং বিভাগ তুলনায় ভাল। তবে ব্যাটিং হতশ্রী। তাই বৈঠকে প্রাক্তন তিন তারকাকে ডাকা হয়েছে। শ্যালো বলেন, 'বৈঠকে আমাদের তিন সেরা ব্যাটার ক্লাইভ লয়েড, ভিভিয়ান রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়াও শিবনারায়ণ চন্দ্রপাল, ডেসমন্ড হেনস এবং ব্র্যাডশহ থাকছে। বেসরকারিভাবে ওদের ডাকা হয়েছে। এরা আমাদের ক্রিকেটের অতীত উজ্জ্বল করেছে। নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে আমরা এদের সাহায্য নিতে চাই।' এই সাপোর্ট গ্রুপ একদিনের ক্রিকেট এবং টি-২০ ক্রিকেটেও সাহায্য করবে কিনা এখনও জানা নেই। এই বিষয়ে কিছু বলেননি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের এই হতশ্রী চেহারার জন্য কার্যত ড্যারেন স্যামিকে দোষ দেন কার্ল হুপার। নিজের হতাশা ব্যক্ত করতে দ্বিধা করেননি প্রাক্তন অধিনায়ক। হুপার বলেন, 'আমার রাগ হচ্ছে। একইসঙ্গে আমি হতাশও। কারণ কয়েক বছর আগেও আমরা সঠিক দিশাতে এগোচ্ছিলাম। তারপর একাধিক পরিবর্তন করা হয়। গত দু'তিন বছরের প্রচেষ্টা পুরো ধুলোয় মিশিয়ে গিয়েছে। আমরা প্রাক্তন কোচ আন্দ্রে কোলের অধীনে দল তৈরি করছিলাম। তারপর তাঁকে সরিয়ে ড্যারেন স্যামিকে আনা হয়। যে প্রথমে শুধু আমাদের সাদা বলের ফরম্যাটে কোচ ছিল। কিন্তু এখন সব ফরম্যাটের কোচ। এবার এগোনোর বদলে, প্রতিনিয়ত আমরা দু'ধাপ পিছিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে আমরা কোথায় যেতে পারব? এরপর আমাদের ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ। তিন ম্যাচের এই সিরিজ যথেষ্ঠ কঠিন হবে। তাই টানেলের শেষে আমি কোনও আলো দেখতে পারছি না।' এর থেকেই স্পষ্ট ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের আগামীর পথ একেবারেই মসৃণ নয়।
