আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের হিন্দু ক্রিকেটার তিনি। নাম মহিন্দর কুমার। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে একসময়ে পরিচিত নাম ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর জীবনেই নেমে এসেছে ঘোর ট্র্যাজেডি।
ডায়াবেটিস থেকে সংক্রমণ হয় পায়ে। তা ছড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে দুটো পাই শরীর থেকে বাদ দিতে হয়। ৬৫ বছর বয়সি এই প্রাক্তন ক্রিকেটার এখন শয্যাশায়ী। সরকার, দেশের ক্রিকেটমহল এবং সহৃদয় মানুষের কাছে সাহায্যপ্রার্থী তিনি।
হিন্দু পরিবারের ছেলে মহিন্দর। ১৯৫৯ সালের ১১ জুন তাঁর জন্ম হয় করাচিতে। অতীত দিনের নামী ফাস্ট বোলার তিনি। ৬৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন। ১৮৭টি উইকেটের মালিক তিনি। ৫৩টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন। তাঁর ঝুলিতে ৬৪টি উইকেট।
১৯৭৬ সালে পাকিস্তান পিডব্লিুডি-র হয়ে কেরিয়ার শুরু করেন মহিন্দর। পরে ইউবিএল এবং এডিবিপি-তে খেলেন মুদাস্সর নজর, হারুন রশিদ, সিকান্দর বখ্ত, সেলিম ইউসুফদের মতো তারকাদের সঙ্গে।
করাচির কেপিআই মাঠে কোচিং অ্যাকাডেমি ছিল মহিন্দরের। সোহেল খান, মহম্মদ সামি, দানিশ কানেরিয়া, তনভীর আহমেদের মতো ক্রিকেটারদের কোচিং করিয়েছেন। করাচির নির্বাচক ছিলেন তিনি। মহিন্দর নির্বাচক থাকার সময়ে শাহিদ আফ্রিদি, হাসান রাজা, দানিশ কানেরিয়া, ফয়জল ইকবালের মতো তারকাদের উত্থান।

করাচির গার্ডেন অঞ্চলের বাড়িতে এখন শয্যাশায়ী মহিন্দর। ডায়াবেটিস থেকে তাঁর গোড়ালিতে সংক্রমণ ছড়ায়। ক্রমে তা ভয়াল রূপ নেয়। চিকিৎসকরা তাঁর এক পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন। গ্যাংরিনের আশঙ্কা করে আরও একটি পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে তাঁর হাঁটাচলার ক্ষমতা আর নেই। পর মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছেন তিনি। 
 
 পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কিছু আর্থিক সাহায্য করেছিল মহিন্দরকে। মুলতান সুলতান্সের মালিক আলি তারিন এবং প্রাক্তন অধিনায়ক মইন খান তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করেছিলেন। চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। একসময়ে তাঁর কোচিং অ্যাকাডেমি ছিল তাঁর আয়ের প্রধান উৎস। এখন সেটিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর ছেলে ছোটখাটো কাজ করেন কোরাঙ্গিতে। সংসারের খরচ সামলানোরই কষ্টকর হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে। তীব্র আর্থিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এই হিন্দু ক্রিকেটার।
মহিন্দর তাঁর এই দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান, সিন্ধুপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ এবং পিসিবি-র চেয়ারম্যান মহসিন নকভিকে। তিনি বলেছেন, ''আমি হিন্দু ঘরের ছেলে। কিন্তু আমার হৃদয়ের স্পন্দন পাকিস্তানের জন্য। আমি এখনও মাঠে ফেরার স্বপ্ন দেখি। আমার অ্যাকাডেমি আবার শুরু হবে, এই স্বপ্নও দেখি। দরকার কেবল সাহায্য।''
এরকম মহিন্দর কুমাররা ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের সর্বত্র। সময় পেরিয়ে গেলে তাঁদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। প্রাক্তন পাক ক্রিকেটারের গল্প আরও একবার এই সত্যি তুলে ধরল।
