কৃশানু মজুমদার: যে কোনও মুহূর্তে তিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তাঁর ডিফেন্স চেরা পাসের প্রশংসা করেন একসময়ের সতীর্থরাও। বাংলাদেশের ফুটবলমহলে তাঁকে নিয়ে চর্চা শেষ হওয়ার নয়। তিনি মিগুয়েল।

ওই বঙ্গ থেকে এই বঙ্গে আসার পর তিনিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। চায়ের পেয়ালায় উঠেছে তুফান। ইস্টবেঙ্গলের হৃদপিণ্ড মিগুয়েল সমর্থকদের নয়নের মণি-তে পর্যবসিত হয়েছেন। 

বসুন্ধরা কিংসে খেলার সময়ে অস্কার ব্রুজোঁ ছিলেন মিগুয়েলের 'দ্রোণাচার্য'। ইস্টবেঙ্গলে গুরু-শিষ্য ফের কাছাকাছি। গুরুর আবার শিষ্যের উপরে অগাধ আস্থা। যেদিন কলকাতায় পা রেখেছিলেন লাল-হলুদের নবাগত ব্রাজিলিয়ান, সেদিন ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ''আমি এসে গেছি।'' 

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছিলেন মিগুয়েল। ডুরান্ড কাপের ডার্বিতে এহেন মিগুয়েল আবার অস্বস্তিতে ফেলে দেন মোহনবাগান রক্ষণকে। বল পায়ে পাখির মতো উড়েছেন দুই উইং ধরে। 

আরও পড়ুন: রশিদ-হামিদকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বেশি জানে! ডার্বির হ্যাংওভার কাটিয়ে জেতা কঠিন, দাবি অস্কারের...

বুধবার ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের সামনে ডায়মন্ড হারবার। অস্কার ব্রজোঁর হিরে সেই মিগুয়েল। সেমি যুদ্ধের বল গড়ানোর আগে বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসানের মুখেও মিগুয়েল বন্দনা। তিনি বলেন, ''মিগুয়েল ক্লাস প্লেয়ার। ডার্বি দেখেছি। ইস্টবেঙ্গল জেতায় আমি দারুণ খুশি। বসুন্ধরার হয়ে মিগুয়েল দুর্দান্ত খেলেছিল। এবার ইস্টবেঙ্গলে গিয়ে ও ফুল ফোটাবে।''  

বাংলাদেশের সবুজ মাঠের প্রতিটি ঘাস আলাদা করে জানে মিগুয়েল রূপকথা। বসুন্ধরার তারকা ফুটবলার মহম্মদ সাদউদ্দিন ইস্টবেঙ্গেলর ব্রাজিলীয় তারকা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ''মিগুয়েল যদি ঠিকমতো খেলতে পারে, তাহলে ইস্টবেঙ্গল এবার দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পারবে।'' যদিও দিল্লি এখনও বহু দূর। মিগুয়েলকে দেখার জন্য বহু দূর থেকে ছুটে আসা যায়। 

বাঁ পায়ের ব্রাজিলীয় শিল্পী সম্পর্কে বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান বলছেন, ''গতবছর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মহমেডানের সাত জনকে কাটিয়ে গোল করেছিল মিগুয়েল। ওই গোলটা পারলে দেখবেন। মাজিয়ার বিরুদ্ধে গোলটা ইউটিউবে ভাল করে দেখুন, তাহলে বুঝতে পারবেন মিগুয়েল কী জিনিস!'' মাজিয়ার বিরুদ্ধে সতীর্থর সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে দূরপাল্লার শটে গোল করেন মিগুয়েল। আগেই দেখে ফেলেছিলেন মাজিয়ার গোলকিপার এগিয়ে এসেছেন। মিগুয়েলের শট মাজিয়ার জালে জড়িয়ে পড়ার পরে বিস্মিত গোলকিপার কিছুক্ষণ মাটিতে পড়েছিলেন। বুঝতেই পারছিলেন না কী হয়ে গেল!

মিগুয়েল মানে ঠিকানা লেখা পাস। মিগুয়েল মানেই জয়ের পাসওয়ার্ড খুঁজে পাওয়া। তিনি পাস বাড়াবেন আর স্ট্রাইকাররা গোল করবেন, বসুন্ধরার জার্সি গায়ে এমন বহু দৃশ্যের জন্ম দিয়েছেন মিগুয়েল। ইস্টবেঙ্গলেও হয়তো সেই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হবে।

ঠিকানা বদলালেও তিনি সেই গৃহস্থের গর্ব, পড়শির ঈর্ষা হয়েই থেকে গিয়েছেন।  ব্রাজিলীয় তারকাকে ধরে রাখতে না পারায় কি আক্ষেপ রয়েছে? বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট অকপট। খুল্লমখুল্লা বললেন, ''আমরা ধরে রাখতে পারিনি বলে এতটুকু আফসোস নেই। ইস্টবেঙ্গলে গিয়েছে, তাই আমি খুশি। মোহনবাগানে গেলে কষ্ট পেতাম।'' 

একদিকে মিগুয়েল, অন্যদিকে অস্কার ব্রুজোঁ। ইস্টবেঙ্গলে গুরু-শিষ্যের যুগলবন্দি উপভোগ করতে চান বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার-কর্তারাও। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন--মিগুয়েল শো কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। 

আরও পড়ুন: মহিলা বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক হরমনই, বাংলা থেকে সুযোগ পেলেন কে জানুন