আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের শহরগুলি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের কারণে আকর্ষণীয়। জয়পুর, কানপুর, হায়দ্রাবাদ এবং ফরিদাবাদের মতো নামগুলি সকলের কাছে পরিচিত। কিন্তু কেন এত ভারতীয় শহরের নাম 'পুর' বা 'বাদ' দিয়ে শেষ হয়? এই সাধারণ এই শব্দগুল কেবল কাকতালীয় নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে ভারতের জটিল ইতিহাস। সমাজমাধ্যমে এই প্রশ্ন ঝড় তুলে দিয়েছে।

প্রশ্নটি হল ভারতের প্রায় প্রতিটি শহরের নামের শেষে 'পুর' বা 'বাদ' থাকে কেন? একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে করা এই প্রশ্নে এখনও পর্যন্ত ১০ লক্ষ কমেন্ট পড়েছে। কেউ লিখেছেন, প্রাচীন রাজাদের আমল থেকেই রীতি চলছে। কেউ উল্লেখ করেছেন মধ্যযুগীয় ইতিহাসের কথা।

এই শব্দগুলি ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভাষার সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত। ‘পুর’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ শহর। প্রাচীন ভারতে এটি সাধারণত জনবসতির নামকরণের জন্য ব্যবহৃত হত। জয়পুর, উদয়পুর এবং গোয়ালিয়রের মতো শহরগুলিতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হত। এছাড়াও, ‘পুর’ শব্দটির অর্থ ‘দুর্গ’ও হতে পারে এবং দুর্গ নির্মাণের আগে প্রতিষ্ঠিত শহরগুলিতে প্রায়শই রাজার নামে ‘পুর’ যুক্ত করা হত। উদাহরণস্বরূপ, জয়পুরের নামকরণ করা হয়েছিল মহারাজা জয় সিংহের নামে, যেখানে ‘পুর’ তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শহরের প্রতীক। ভাষাবিদরা জানিয়েছেন, ‘পুর’ শব্দটির ব্যবহার বৈদিক যুগেও হত। ঋগবেদে এর উল্লেখ রয়েছে দূর্গ বা জনবসতি বোঝাতে। এই শব্দটি মধ্য ও দক্ষিণ ভারতেও জনপ্রিয় ছিল, যেমনটি বারাণসী (কাশীপুর) এবং তিরুপুর।

অন্যদিকে, ‘বাদ’ শব্দটির শিকড় মোঘল যুগে। পার্সি শব্দ আবাদ থেকে এর উৎপত্তি। এর অর্থ জনবসতি বা উন্নত জায়গা। মোঘল শাসকরা অনেক শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেগুলির নামের শেষে 'বাদ' ছিল। যেমন হায়দরাবাদ (হায়দার আলির নামে নামকরণ করা হয়েছিল) এবং আহমেদাবাদ (আহমেদ শাহের নামে নামকরণ করা হয়েছিল)। এই নামগুলি মোঘল যুগের প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলিন। নদী বা জলের উৎসের কাছে প্রতিষ্ঠিত শহরগুলিতে প্রায়শই 'বাদ' শব্দ ব্যবহৃত হত। যা কৃষিকাজ এবং বসতি স্থাপনের জন্য জলের গুরুত্বকে নির্দেশ করে।

নয়ডা, গুরগ্রাম এবং চণ্ডীগড়ের মতো আধুনিক ভারতীয় শহরগুলি নতুন পরিচয় তৈরি করছে। কিন্তু 'পুর' এবং 'বাদ'- ভারতের অতীতের প্রমাণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে।