আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা দিতে হবে বিদ্যুৎ পরিষেবা। আর তা না দেওয়ায় সোমবার সকাল থেকে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে  বিক্ষোভ দেখালেন আঁধুয়া গ্রামের কয়েকশো গ্রামবাসী। এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সিআইএসএফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ না লিখিত প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে তাঁদেরকে ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে ততক্ষণ তাঁরা বিক্ষোভ-অবরোধ চালিয়ে যাবেন। 

বর্তমানে ২১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ফরাক্কা এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৯৮৬ সালে জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এখানে বর্তমানে ছ'টি ইউনিট চালু রয়েছে। আঁধুয়া গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা দাবি করেন, প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে যখন এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয় সেই সময় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জমি দান করেছিলেন। তাঁদের দাবি,  সেই সময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আজীবন তাদেরকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামে ভাল রাস্তা এবং পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। 

সামিরুল শেখ নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “কয়েক মাস আগেও আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ পেতে কোনও সমস্যা হয়নি। গ্রামের কিছু বাড়িতে বিদ্যুতের মিটারের লাইন ঢোকার পর থেকে এখন আমাদের বাড়িতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রায় প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বেশিরভাগ বাড়ি বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: বিহারে এসআইআর: বাদ যাওয়া ৬৫ লক্ষের মধ্যে ফের আবেদন মাত্র ৩৩ হাজারের, নাম কাটতে আবেদন দু’লক্ষের
 
তিনি দাবি করেন, “এনটিপিসি কর্তৃপক্ষকে আমাদের ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দিতে হবে। কারণ তারা আমাদের পৈতৃক জমিতেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছে।”
 
একই দাবি করে খুরশিদা বিবি নামে বিক্ষোভরত অপর এক মহিলার। তিনি বলেন, “এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার জন্য আমরা আমাদের জমি-বাড়ি সব দিয়েছি। তাও কেন এনটিপিসি বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেবে না? এত দিন ধরে আমরা বিনামূল্যেই তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে এসেছি।”
 
যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ কোনওদিনই আঁধুয়া গ্রামের কোনও বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেয়নি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আশেপাশের এলাকা  আলোকিত করার জন্য তারা রাস্তার ধারে বহু বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতে সেখানে পথবাতি লাগিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে আঁধুয়া গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা  এতদিন পথবাতির জন্য লাগানো বিদ্যুতের তার থেকে হুকিং করে নিজেদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এসি, ফ্রিজ সহ বিভিন্ন জিনিস চালিয়ে এসেছেন।
 
গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে, রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া এবং মিটার লাগানোর কাজ করতে গেলে এক শ্রেণির গ্রামবাসী তাদের বাধা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: 'ধর্না আমাদের চলবেই', সেনা তৃণমূলের প্রতিবাদ মঞ্চ খুলতেই পৌঁছলেন মমতা, জানিয়ে দিলেন পরবর্তী পদক্ষেপ
 
ফরাক্কা এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আইএনটিটিইউসি চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সোমেন পাণ্ডে বলেন, “আইনত এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ কোনও বাড়িতে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ দিতেই পারে না এবং এতদিন তারা এখানে সেটা দেয়নি। গ্রামবাসীদের দাবি থাকার জন্য তারা এলাকায় বহু জায়গায় পথবাতি বসিয়ে দিয়েছিল এবং সেই বিদ্যুতের লাইনে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত।”
 
তিনি জানান, “বহু গ্রামবাসী ওই বিদ্যুতের তার থেকে বেআইনিভাবে হুকিং করে নিজেদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে হাই ভোল্টেজের বিভিন্ন মেশিন বাড়িতে বসিয়েছেন। এর ফলে প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা ওই গ্রামের উত্তর দিকের বাসিন্দারা  বাড়িতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ পেলেও দক্ষিণ অংশের লোকেরা 'লো ভোল্টেজ' সমস্যায় ভুগছেন।”
 
তিনি জানান, “এই সমস্যা দূর করার জন্য এবং ওই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ওই গ্রামে প্রাকা রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গ্রামে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়ে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ তা ডব্লিউবিএসইডিসিএল-কে হস্তান্তর করেছে। হুকিং করে বাড়িতে বিদ্যুৎ নিতে অভ্যস্ত কিছু লোক এখন বাড়িতে মিটার বসিয়ে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনতে ইচ্ছুক নন। তাঁরাই এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।”
 
ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, “আজকে আমি বিধানসভার অধিবেশনে ব্যস্ত রয়েছি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কী ঘটনা ঘটেছে আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গোটা বিষয়টি নিয়ে ফরাক্কা এনটিপিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তাদের প্রতিক্রিয়ার জন্য ইতিমধ্যেই জনসংযোগ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে পরে তা এই প্রতিবেদনে যোগ করা হবে।