মিল্টন সেন, হুগলি: পুরনো সেই রীতি আজও অব্যাহত। আজও দশমীতে মিষ্টিমুখ করার প্রচলিত প্রথা, এখানে নেই। চন্দননগর তেমাথা শিবমন্দির সার্বজনীনের প্রতিমা বরণ হয় পা ছুঁয়ে। শাড়ি পড়ে, বরণ করেন ছেলেরা। শোভাযাত্রায় চন্দননগরের বিশাল আকৃতির জলভরা সন্দেশ দেওয়া হয় রাণীমার হাতে।
বিশ্বের দরবারে বহুচর্চিত শহর চন্দননগর। বিশেষ করে আলোর কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত এই শহরের ওপর নাম ‘আলোর শহর’। পাশাপাশি এই শহরের জগদ্ধাত্রী পুজো জগদ্বিখ্যাত। একইসঙ্গে এই শহরের জলভরা সন্দেশের সুনাম আজও অটুট। আর সেই উৎসবে জলভরা সন্দেশ থাকবে না তা ভাবাই যায় না। কড়া পাকের সন্দেশের ভিতর জল ভরা থাকে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া তালশাঁস আকৃতির সেই সন্দেশ চন্দননগরের আরও একটি ঐতিহ্য। তাই শহরে যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে উৎসবে জলভরা না থাকার কথা ভাবেই যায় না।
পুজোর কয়েক দিন চন্দননগর শিব মন্দির তেমাথা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোয় উপচে পড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। সবাই ভিড় করেন রাণীমার অপরূপ দেখার জন্য। কথিত আছে চন্দননগরের সবথেকে বড় ঠাকুর রাণীমা। মাকে দেখতে গেলে মাথা উঁচু করে দেখতে হবে। এই বছর পাঁচ দিনের পুজো শেষে শোভাযাত্রা হয় শনিবার। শোভাযাত্রার দিন রাণীমাকে যখন রাজপথে বের করা হয়, তখন হাতে দেওয়া হয় চন্দননগরের বিখ্যাত জলভরা সন্দেশ। আর সেই জলভরা সন্দেশের ওজন হয় দুই কেজি করে।

পুজো কমিটির সদস্য গণেশ নাথ বলেন, “রাণীমার উচ্চতা ২৮ ফুট। এই বছর ৮১ বছরে পদার্পণ করেছে পুজো। এখানে মায়ের উচ্চতা অনেক বড় তাই দশমীতে যখন বরণ করা হয় তখন অত উঁচুতে গিয়ে মাকে বরণ করা সম্ভব হয় না। তাই মাকে মিষ্টিমুখ করানো যায় না। মায়ের পায়ে বরণ করা হয়। তাই মা যখন শোভাযাত্রায় বের হন তখন মায়ের হাতে দেওয়া হয় চন্দননগরের বিখ্যাত জলভরা। চার হাতে দুটো চার কেজি ও দুটো দু’কেজি ওজনের জলভরা দেওয়া হয়েছে মাকে। তবে এখানে মায়ের বরণেও রয়েছে বৈশিষ্ট্য। মেয়েদের বদলে ছেলেরা লালপাড় শাড়ি পড়ে দেবীর বরণ করে থাকেন। এই প্রথা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।”
মায়ের নাম কেন হল রাণীমা? উদ্যোক্তারা বলেন, দেবীকে রাণীর মতো করে সাজানো হয়েছিল একবার। তখন থেকে লোকমুখে প্রচার শুরু হয় রাণীমার।
