আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুধবার সকালে রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যে ৮.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই বিশাল ভূমিকম্পের ফলে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে সুনামির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং আলাস্কা এবং হাওয়াই থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার হনোলুলুতে সুনামির সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে, যার ফলে বাসিন্দারা উঁচু স্থানে চলে যান। জাপান আবহাওয়া সংস্থা অনুযায়ী, জাপানের উত্তরের প্রধান দ্বীপ হোক্কাইডোর দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত টোকাচিতে ৪০ সেন্টিমিটার (১.৩ ফুট) সুনামি রেকর্ড করা হয়েছে।
গত ২৮ মার্চ, উত্তর ভারত থেকে মায়ানমার পর্যন্ত অঞ্চলগুলিকে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। মাত্রা ছিল ৭.২, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে বিশ্ব ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে?
১৯৬০ সালে, চিলির ভালদিভিয়ায় এই ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই মারাত্মক ভূমিকম্পটি প্রায় দশ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। এর ফলে বিশাল সুনামির ঢেউ সৃষ্টি হয়েছিল। ভালদিভিয়া আসলে চিলির একটি উপকূলীয় অঞ্চল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৯.৫। এটি এখনও ‘গ্রেট চিলিয়ন ভূমিকম্প’ নামে পরিচিত। এটি ঘটেছিল ১৯৬০ সালে ২২ মে। বিভিন্ন রেকর্ড ঘেঁটে জানা গিয়েছে, এটি এখনও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল চিলির। যার আনুমানিক পরিমাণ ৫৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। চিলির উপকূল বরাবর দক্ষিণ আমেরিকান প্লেটের নীচে নাজকা প্লেটের সংঘর্ষের ফলে এই ভূমিকম্পটি ঘটেছিল।
চিলির ভয়াবহ ভূমিকম্প দশ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। বিভিন্ন গবেষণায় এর মাত্রা ৯.৪ থেকে ৯.৬-এর মধ্যে অনুমান করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টে ১১ মিনিটে এটি আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের ফলে একটি শক্তিশালী সুনামির সৃষ্টি হয় যা দক্ষিণ চিলি থেকে শুরু করে হাওয়াই, জাপান, ফিলিপাইন, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সূত্রের উপর নির্ভর করে মৃতের সংখ্যা এক হাজার থেকে ছয় হাজার ছিল বলে অনেকের অনুমান। সাধারণত, ৬ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প উল্লেখযোগ্য ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে। যদি এটি আরও কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়, তাহলে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়।

১০ মাত্রার ভূমিকম্প কি সম্ভব?
বিজ্ঞানের মতে এবং আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (USGS) এই ধরণের ঘটনাকে অসম্ভব বলে মনে করা হয়। অন্য কথায়, পৃথিবীতে কখনও ১০ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কোন ভূমিকম্পগুলিকে মৃদু এবং কোনটি তীব্র বলে মনে করা হয়
০ থেকে ১.৯ - কেবল সিসমোগ্রাফ দ্বারা শনাক্ত করা যায়
২ থেকে ২.৯ - সামান্য কম্পন
৩ থেকে ৩.৯ – খুব কাছকাছি দিয়ে যাওয়া ট্রাকের মতো মনে হবে
৪ থেকে ৪.৯ - জানালা ভেঙে যেতে পারে; পাঁচিলে লাগানো ফ্রেম পড়ে যেতে পারে
৫ থেকে ৫.৯ - আসবাবপত্র কাঁপতে পারে
৬ থেকে ৬.৯ - ভবনের ভিত্তি ফাটতে পারে; উপরের তলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
৭ থেকে ৭.৯ - ভবন ধসে পড়তে পারে; ভূগর্ভস্থ পাইপ ফেটে যেতে পারে
৮ থেকে ৮.৯ - ভবনের পাশাপাশি, বড় সেতুও ভেঙে পড়তে পারে
৯ এবং তার উপরে - সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপ; খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি মাটিতে ঢেউ খেলতে দেখতে পারেন। যদি কাছাকাছি সমুদ্র থাকে, তাহলে সুনামির সম্ভাবনা প্রবল।
