আপেল এমন এক ফল, যা কমবেশি সকলের বাড়িতেই থাকে। খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই এর উপকারিতাও অনেক। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আপেলে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল ও ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। এই উপাদানগুলি শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদ ডা. উষাকিরণ সিসোদিয়া জানান, এই খারাপ কোলেস্টেরল ধমনীতে জমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে।

১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া ‘নার্সেস হেলথ স্টাডি’ দেখিয়েছে, নিয়মিত আপেল খেলে ফুসফুসের ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে। এই তথ্যগুলো থেকেই বোঝা যায়, সুস্থ থাকার জন্য আপেল সত্যিই একটি ভাল খাদ্য।

আপেলের পুষ্টিগুণ কী?
আপেল শুধু সুস্বাদু ফল নয়, এটি নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিতে ভরপুর। একটি মাঝারি আকারের আপেলে সাধারণত থাকে
প্রায় ৯৫ ক্যালোরি
২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
১৯ গ্রাম প্রাকৃতিক শর্করা
৪ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার
ভিটামিন সি-এর দৈনিক চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ
পটাশিয়াম ও অন্যান্য জরুরি খনিজের প্রায় ৬ শতাংশ

এছাড়া আপেলে কুয়েরসেটিন, ক্যাটেচিন ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যাল নষ্ট করতে সাহায্য করে। ডা. সিসোদিয়ার মতে, এই উপাদানগুলি শরীরের প্রদাহ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করে।

হজমের সমস্যা কমাতে আপেল কতটা উপকারী?

হজমের জন্য আপেল খুবই ভাল। এতে থাকা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়, দু’ধরনের ফাইবারই অন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য-সহ নানা হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। যেভাবেই খান না কেন, আপেল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

আপেল কি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে?

বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হৃদরোগ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আপেল রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপেল কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে লাল রঙের আপেল এই ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।

ওজন কমাতে আপেল কি ভাল?

ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপেল একটি চমৎকার বিকল্প। এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি লোভ কমায়। মিষ্টি স্বাদের কারণে এটি মিষ্টি খাবারের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।

আপেল কি হাড় মজবুত করে?

হাড়ের কথা উঠলেই সাধারণত দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারের কথা মনে আসে, কিন্তু আপেলও এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। আপেলে থাকা বোরনের মতো কিছু উপাদান হাড় মজবুত করতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত আপেল খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমতে পারে।

আপেল কি কোলাজেন বাড়ায়?

আপেলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বক টানটান ও সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত আপেল খেলে ত্বক উজ্জ্বল থাকে। এছাড়া আপেল ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।

আপেল কি শরীর হাইড্রেটেড রাখে?

আপেলে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। আপেল বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। ফলে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সহজেই জায়গা করে নেয়।
বেশি আপেল খেলে কি সমস্যা হতে পারে? নির্দিষ্ট কোনও সীমা না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে এক বা দু’টি আপেল বেশিরভাগ মানুষের জন্যই যথেষ্ট উপকারী। এতে প্রাকৃতিক শক্তি পাওয়া যায়, হজম ভাল থাকে এবং প্রসেসড খাবারের মতো হঠাৎ এনার্জি কমে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে না। তবে যাঁদের পেট সংবেদনশীল, তাঁদের খালি পেটে আপেল খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভাল। নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে খাওয়াই সবচেয়ে জরুরি।