আজকাল ওয়েবডেস্ক: জন্মের পরের মুহূর্তগুলো, প্রথম মাটিতে পা ফেলা, প্রথম কথা শেখা বা প্রথম শক্ত খাবার খাওয়া। শৈশবের টুকরো টুকরো নানা স্মৃতি মনে রাখতে পারলে কি ভালই না হত! কিন্তু জীবনের প্রথম কয়েকটি বছরের অমূল্য সময়ের কথা আমরা চাইলেও মনে করতে পারি না। কখনও কী ভেবে দেখেছেন কেন এমনটা হয়? গবেষকেরা বহুদিন ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। সম্প্রতি এবিষয়ে জানা গিয়েছে চমকে দেওয়া তথ্য।
শৈশবকাল দ্রুত শেখার সময় হওয়া সত্ত্বেও এই সময়ের স্মৃতিগুলো পরবর্তী শৈশবে কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর স্থায়ী হয় না।। বেশিরভাগ মানুষই তিন বছর বয়সের আগে পর্যন্ত জীবনের কোনও কিছুই মনে করতে পারেন না। বিজ্ঞানের ভাষায় এই রহস্যকে বলে ‘ইনফ্যান্টাইল অ্যামনেশিয়া’। দীর্ঘদিনের সেই রহস্যভেদ করতেই সম্প্রতি একটি অত্যাধুনিক গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে এক বছরের কম ও বেশি বয়সি ২৬ জন শিশুর উপর ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফআমআরআই) ব্যবহার করে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে শিশুরা প্রথম দিকে মস্তিষ্কে স্মৃতি , সঞ্চয় করতে পারলেও সেই স্মৃতি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা থাকে না।
বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, মানুষের শিশুকালের কথা মনে করতে না পারার কারণ হচ্ছে হিপ্পোক্যাম্পাস। এটি মানবদেহের মস্তিষ্কের এমন এক অংশ, যা স্মৃতি সঞ্চয় করে। শিশুকালে এটি পুরোপুরি বিকশিত হতে পারে না।
বর্তমানে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়ে অনেক আগেই স্মৃতি তৈরি করতে পারে শিশুরা।
সমস্ত পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছে, খুব ছোট শিশুরাও তাদের হিপ্পোক্যাম্পাস ব্যবহার করে ‘এপিসোডিক’ স্মৃতি অর্থাৎ নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি ঠিক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মতোই তৈরি করছে। কিন্তু তারপরও কেন শৈশবের কথা মনে রাখা যায় না? যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, শৈশবের স্মৃতিগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। খুব দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। আরেকটি কারণ হচ্ছে, এসব স্মৃতি বড় হওয়ার পরও মস্তিষ্কের গভীরে সঞ্চিত থাকে। তবে সেগুলোতে প্রবেশ করা যায় না।
গবেষকদের অনুমান, এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধারণাটি সত্যি হতে পারে। তাঁরা বলছেন, মানুষের প্রাথমিক জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি এখনও মস্তিষ্কের কোথাও রয়ে যেতে পারে, যা মস্তিষ্কের কোথাও হয়েতো আটকে রয়েছে। সেই লুকানো স্মৃতিগুলো মানুষ বড় হওয়ার পরও মনে রাখতে পারে কিনা তা নিয়ে এখনও গবেষণা জারি রয়েছে।
