আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনের পর দিন একই রুটিনে বেঁধে থাকা জীবনে ক্লান্তি এবং একঘেয়েমি আসবেই। ঘুম থেকে ওঠা, অফিসের পথ, বাড়ি ফেরা, রান্না-ধোয়া—এই গতানুগতিক চক্রের মধ্যে অনেকেই একটি ছোট্ট “গেটওয়ে”-র স্বপ্ন দেখেন। একটু ঘুম বাড়ানো, প্রতিদিনের যাতায়াতের ঝামেলা থেকে বিরতি, নতুন জায়গা দেখা, সূর্যের আলোয় সময় কাটানো, কিংবা শুধু মনকে শান্ত করা—এক সপ্তাহের ছুটিই যেন হতে পারে পুনরুজ্জীবনের সেরা উপায়।

শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য ছুটি যে কার্যকর, তা দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে নতুন গবেষণা বলছে, ছুটি শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য নয়, রোমান্টিক সম্পর্কের জন্যও হতে পারে অত্যন্ত উপকারী। দাম্পত্য জীবনে যে চাপ, দায়িত্ব, পারিবারিক কাজের বণ্টন এবং দৈনন্দিন ছন্দ তৈরি হয়, তা যতটা দরকারি, অতিরিক্ত হয়ে গেলে ততটাই সম্পর্ককে একঘেয়ে করে তোলে।

রুটিন ভাঙলেই নতুনের সন্ধান

দৈনন্দিন রুটিন অনেক সময় অজান্তেই সম্পর্কের মধ্যে উদাসীনতা এনে দিতে পারে। অভ্যাসের চাপে নতুনত্ব হারিয়ে যায়, ফলে সঙ্গীর উপস্থিতিতেও আগের সেই উজ্জ্বলতা থাকে না। সম্পর্ক ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এই একঘেয়েমি দূর করার অন্যতম উপায় হতে পারে ছুটি—যেখানে পরিচিত পরিবেশ ও চাপের বাইরে গিয়ে দু’জন মানুষ নতুন অভিজ্ঞতায় ডুব দিতে পারেন।

স্ব-প্রসারণ তত্ত্ব ও সম্পর্কের উন্নতি

মনোবৈজ্ঞানিক স্ব-প্রসারণ তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ জন্মগতভাবে নতুন কিছু জানতে, শিখতে এবং বেড়ে উঠতে চায়—আর সম্পর্কের মধ্য দিয়েই সেই শেখা ও বেড়ে ওঠা সম্ভব। যখন দু’জন সঙ্গী একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতায় অংশ নেন, তখন সম্পর্কের মধ্যে আসে উত্তেজনা, ঘনিষ্ঠতা ও আকর্ষণ।

এই তত্ত্বের ভিত্তিতেই সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ছুটির সময় দম্পতিরা যদি একসঙ্গে নতুন কিছু করেন—অপরিচিত স্থান ঘোরা, নতুন খাবার চেখে দেখা, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নেওয়া বা একসঙ্গে কোনো অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া—তাহলে সম্পর্কের নানা দিকেই ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়।

নতুন গবেষণা কী বলছে?

দুই দফা গবেষণার ফল জানাচ্ছে—

১. সম্পর্কের সন্তুষ্টি বাড়ে
একসঙ্গে ছুটি কাটালে দম্পতিরা সম্পর্ক নিয়ে বেশি সন্তুষ্ট হন। দম্পতিদের ক্ষেত্রে সুবিধা হল যখন ইচ্ছা তখনই একসঙ্গে বেরিয়ে পড়তে পারেন। ছুটির মধ্যে যদি নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়, তবে এই সন্তুষ্টি আরও বেড়ে যায়।

২. রোমান্টিক আকর্ষণ বাড়ে
নিত্যদিনের চাপ থেকে দূরে সময় কাটানোর ফলে দু’জনের মধ্যকার রোমান্টিক টান বাড়তে পারে। নতুন অভিজ্ঞতা সেই আকর্ষণকে আরও তীব্র করে।

৩. শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়
দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ছুটিতে একসঙ্গে নতুন কিছু করেছেন, তাদের মধ্যে ছুটির পর শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ছুটি পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ দিক

গবেষণা থেকে কিছু মূল পরামর্শ উঠে এসেছে—

যেকোনো দম্পতি লাভবান হতে পারেন—সম্পর্কের বয়স যতই হোক, তিন মাস হোক বা ৩০ বছর, ছুটি একসঙ্গে কাটালে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।

সংখ্যা নয়, গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ—বছরে কতবার ছুটি কাটানো হলো, সেটা নয়; ছুটিতে কী অভিজ্ঞতা হলো সেটাই আসল।

একসঙ্গে ছুটি, আলাদা নয়—একলা ছুটি মানসিক বিশ্রাম দিতে পারে, তবে সম্পর্কের উন্নতিতে সাহায্য করে না।

নতুন অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিন—বেশি খরচের ছুটি নয়, বরং নতুন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ছুটি সম্পর্কের জন্য বেশি লাভজনক। বাজেটের মধ্যে থেকেও সম্পর্ককে নতুন রূপ দেওয়া সম্ভব।


সম্পর্ককে শক্তিশালী রাখতে শুধু পরিশ্রম বা দায়িত্ব নয়, মাঝে মাঝে বিশ্রামও জরুরি। সাম্প্রতিক গবেষণার মতে, এই বিশ্রাম যদি একসঙ্গে কাটানো বিশেষ সময়ে পরিণত হয়, যেখানে দু’জনেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা করেন, তবে তা সম্পর্কের গভীরতা, উষ্ণতা ও সুখ বাড়াতে পারে।

হয়তো তাই, বছরের পর বছর জমে থাকা ক্লান্তি বা দূরত্ব কমিয়ে আনতে একটি ছোট্ট ছুটিই হয়ে উঠতে পারে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়।