আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুরুষদের উর্বরতার সমস্যা নিয়ে সাধারণত খুব একটা আলোচনা হয় না। অনেকেরই মনে হয় এটি শুধুই নারীদের সমস্যা। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমছে। এই সংকটে জীবনযাত্রার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস বড় ভূমিকা রাখছে।

পুষ্টিবিদ বিহান দীক্ষিত জানালেন, একজন পুরুষের থালায় কী থাকছে, সেটাই অনেকাংশে ঠিক করে দেয় তার উর্বরতা। তিনি শুক্রাণুকে ম্যারাথন দৌড়বিদের সঙ্গে তুলনা করেন। যেমন দৌড়বিদদের শক্তির জন্য এনার্জি জেল লাগে, শুক্রাণুর শক্তির জন্য লাগে মাইটোকন্ড্রিয়া। এগুলো শরীরের ক্ষুদ্র শক্তিঘর, যেগুলো ঠিকভাবে কাজ না করলে শুক্রাণু লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়া খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য দরকার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা শুক্রাণুকে একদিকে রক্ষা করে, অন্যদিকে শক্তিও জোগায়।

দীক্ষিত বললেন, ওমেগা-৩ হলো প্রদাহ কমানোর যাদুকর। আখরোট, তিসির বীজ বা স্যামন মাছ নিয়মিত খেলে শরীরে প্রদাহ কমে এবং শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা বাড়ে। বিপরীতে অতিরিক্ত ভাজাভুজি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট শুক্রাণুকে দুর্বল করে দেয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিটামিন সি ও ই, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, কো-এনজাইম কিউ-১০, এল-কার্নিটিনের মতো উপাদান শুক্রাণুকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। তবে এগুলো কখনোই বেশি খাওয়া উচিত নয়। তার মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাসই আসল সমাধান। অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট অনেক সময় উল্টো ক্ষতি করতে পারে। নিয়মিত বাদাম, রঙিন সবজি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্ট নিলেই শুক্রাণুর গুণগত মান অনেক উন্নত হতে পারে।

আরও পড়ুন:  শরীরী চাহিদা পূরণ করবে পরীর মতো আদর রোবট! কৃত্রিম মেধা কাজে লাগিয়ে ডল পুতুলকে এ কী শেখালেন বিজ্ঞানীরা?

আজকের দিনে স্থূলতা, মানসিক চাপ আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে পুরুষদের উর্বরতা হুমকির মুখে পড়ছে। এই বিষয়ে সামাজিকভাবে চুপ না থেকে সচেতন হওয়া দরকার। দীক্ষিতের কথায়, ছোট ছোট খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।
পুরুষ উর্বরতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবচেয়ে আগে মাথায় আসে শুক্রাণুর গুণগত মান ও সংখ্যা। গত কয়েক দশকে সারা পৃথিবীতে পুরুষদের শুক্রাণুর মান ও পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এর বড় কারণ আমাদের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, চর্বি ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার শরীরকে স্থূল করে তোলে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমায় এবং শুক্রাণুর গুণগত মানে প্রভাব ফেলে। আবার ধূমপান, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্যও শুক্রাণুকে দুর্বল করে তোলে।

অন্যদিকে, পর্যাপ্ত ভিটামিন সি, ই, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম গ্রহণ করলে শুক্রাণুর মান উন্নত হয়। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, ফল, বাদাম ও মাছ খেলে প্রজননক্ষমতা অনেকটাই বাড়তে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও পুরুষ উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য জরুরি।

এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিভিন্ন চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব হচ্ছে। তাই সময়মতো সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পুরুষ উর্বরতার সুরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর উপায়।