আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিচ্ছেদের কয়েক মাস পর বা কখনও এক বছর পরও হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেই পুরোনো নাম। একটি ছোট্ট বার্তা—“হাই, কেমন আছো?”—এমন বার্তা অনেকের মনে আবারও দোলা দেয়। কারণ বার্তাটি আসে ঠিক তখনই, যখন তিনি আর প্রতিদিন তার সোশ্যাল মিডিয়া দেখেন না, যখন তিনি ভাবা বন্ধ করেছেন কে স্টোরি দেখল, কবে প্রোফাইল ছবি পাল্টাল। যখন তিনি ধীরে ধীরে নিজের জীবন ফিরে পাচ্ছেন, তখনই প্রাক্তন হঠাৎ সেই নীরবতা ভেঙে সামনে আসে।
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইয়াল গালিলি বলছেন, এই ঘটনাটি খুবই সাধারণ এবং এটি কাকতালীয় নয়। নারী ও পুরুষ বিচ্ছেদের পর একই ধরনের আবেগ অনুভব করলেও প্রক্রিয়াটি এক নয়। নারীরা সাধারণত বিচ্ছেদের পরপরই ব্যথা পান—তারা কাঁদেন, ভাবেন, বন্ধুদের সাথে কথা বলেন এবং ধীরে ধীরে বাস্তবতাকে মেনে নেন। অন্যদিকে, অনেক পুরুষ শুরুতেই শক্ত বা স্বাভাবিক মনে দেখায়। তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখেন—নতুন সম্পর্ক, কাজ, খেলাধুলা, বা সামাজিক জীবনে ডুবে যান। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন ব্যস্ততা কমে আসে, জীবনে শূন্যতা তৈরি হয়, তখনই তারা আগের সম্পর্কের মূল্য বোঝেন এবং আবেগের ওজন অনুভব করতে শুরু করেন।
বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, নারীরা প্রথমে বেশি কষ্ট পেলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা সুস্থভাবে মানিয়ে নেন। পুরুষরা প্রাথমিকভাবে স্থির থাকলেও কিছু মাস পরে গভীরভাবে বিচ্ছেদের প্রভাব অনুভব করেন এবং প্রায়শই তখনই আসে সেই অপ্রত্যাশিত বার্তা। গালিলি বলছেন, “এই বার্তাটি সাধারণত স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্তের ফল নয়, বরং একটি ধরনের পরীক্ষা। সে জানতে চায় তুমি এখনও উপলব্ধ কিনা, অপেক্ষা করছো কিনা, দরজা এখনও খোলা আছে কিনা।”
মনস্তাত্ত্বিকভাবে, যখন একজন নারী সত্যিই সামনে এগিয়ে যান—আত্মবিশ্বাস, স্থিতি, শক্তি ও নতুন জীবনে ভর করে—সেই পরিবর্তন অনেক সময় প্রাক্তন সঙ্গীর কাছে এক ধরনের অদৃশ্য আকর্ষণ তৈরি করে। নারীরা যখন নিজেদের ভেতরে বিকশিত হন এবং প্রাক্তনের কাছ থেকে মানসিকভাবে স্বাধীন হন, তখনই তিনি ফিরে আসতে চান। এটি পরিবর্তনের কারণে পুরুষের উপলব্ধি বাড়ে, তার নিজের সিদ্ধান্ত বা পরিণত মনোভাবের জন্য নয়।
তবে সব বার্তার মানে একই নয়। কেউ কেউ শুধু আগের মতো মনোযোগ বা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চান—সম্পর্ক নয়। তার বার্তা অস্পষ্ট হলে, সে সাধারণত প্রত্যাশা করে আপনি সেই শূন্যতা পূরণ করবেন কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। কোনও কোনও পুরুষ আবার আবেগের তাড়নায় বার্তা পাঠায়, কিন্তু সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার মতো দায়িত্ব, স্বচ্ছতা এবং পরিণত মানসিকতা থাকে না। অন্যদিকে, কেউ যদি সত্যিই ফিরে আসতে চান, তাহলে তার বার্তা বা যোগাযোগ হবে খুব স্পষ্ট—শুধু “হাই” নয়।
অনেকে সিনেমা, কনসার্ট বা কফির অজুহাতে দেখা করতে চায়। গালিলি বলছেন, এগুলো আসলে সম্পর্ক ফেরানোর প্রচেষ্টা নয়, বরং আপনাকে এখনও আগ্রহী কিনা তা পরীক্ষা করা। সত্যিকারের ফিরে আসা হলে কথোপকথন হবে দায়িত্বশীল, স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে—এতটা হালকা ইঙ্গিত দিয়ে নয়।
তাহলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবেন? প্রথমত, তাড়াহুড়ো করে উত্তর দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। নিজের অনুভূতি বোঝার জন্য সময় নিন—এটি কি অভ্যাস, কৌতূহল, একাকিত্ব, নাকি সত্যিকারের অনুভূতি? উত্তর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কথোপকথন আপনার শর্তে হোক—যেমন ফোনে কথা বলার নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা। যদি তার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট হয়, সে সেই প্রচেষ্টা করবে না। আর যদি করে এবং তবুও কথোপকথন স্পষ্ট সিদ্ধান্তে না পৌঁছায়, সেখানেই কথোপকথন শেষ করতে হবে।
যদি এখনও তাকে মিস করেন, সেটি মানবিক অনুভূতি। কিন্তু সেই অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি নয়। আত্মসম্মান, মানসিক স্বাস্থ্য, ভবিষ্যতের লক্ষ্য—এসবই সম্পর্কের স্মৃতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
