এবারের বর্ষা যেন বড্ড একগুঁয়ে। নিম্নচাপের সঙ্গে জুটি বেঁধেছে তো বেঁধেছেই! বৃষ্টি থামার নামটি নেই! অবিরাম ঝমঝম-ঝিরঝিরের ঠেলায় কলকাতা ডুবুডুবু। থইথই করছে জল-কাদা। সিনেমা, শপিং, আড্ডা, টইটই— সব প্ল্যানই আপাতত ভরাডুবির খাতায়।
ঘরবন্দি বিকেল-সন্ধেগুলো মনখারাপে ডুবে না থেকে বরং মেতে উঠুন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। নিজের হাতেই বানিয়ে ফেলুন না ঘর সাজানোর টুকিটাকি। মন তো ভাল হবেই, আপনার সাধের বাড়িও সেজে উঠবে আপনারই সৃষ্টিতে। ভাবছেন কী করা যায়? রইল তারই কিছু সুলুকসন্ধান।
বোতল-বাতি: বাড়িতে ওয়াইনের বোতল আছে? কিংবা সুন্দর আকারের অন্য কোনও বোতল? ভাল করে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে, অ্যাক্রিলিক পেন্ট দিয়ে তার গায়ে এঁকে নিন মনের মতো ছবি বা ডিজাইন। রং শুকিয়ে গেলে ভিতরে ভরে দিতে পারেন ফেয়ারি লাইট বা ছোট্ট একটাই বাল্ব। বোতলের কাচ আর তার উপরের রংবেরঙের নকশার হাত ধরে তৈরি হয়ে যাবে সুদৃশ্য কর্নার ল্যাম্প।

ফোটো ফ্রেম: পুরনো হয়ে যাওয়া কাঠের টুকরো আছে? কিংবা বাতিল কোনও চৌকো বা আয়তাকার বোর্ড? ফোটো ফ্রেমের আকারে কাঠ, প্লাইউড বা বই থেকে ছিঁড়ে যাওয়া হার্ড বাউন্ড মলাট কেটে নিয়ে প্রথম পছন্দসই ম্যাট ফিনিশ কাগজ সাঁটিয়ে ঢেকে নিন। কিংবা রংও করে নিতে পারেন। এবার তার চার ধার জুড়ে বা চার কোণে মনের মতো সাজিয়ে নিতে পারেন রং দিয়ে, কাগজ কেটে বা পুরনো বিয়ের কার্ড থেকে কাটা নকশা বসিয়ে। এর পর চৌকো একটা শক্তপোক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তার উপরে ফ্রেমটা বসিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল মনের মতো ছবি রাখার ফ্রেম। এমন একাধিক ছোট ছোট ফ্রেম একসঙ্গে জুড়ে কোলাজ ফ্রেম ও তৈরি করতে পারেন।
ওয়াল হ্যাঙ্গিং: রংবেরঙের কয়েকটা প্লাস্টিকের চুড়ি লাগবে। আর লাগবে কিছু রঙিন টাসল, কাপড় বা প্লাস্টিকের ফুল, দেওয়ালে ঝোলানোর হুক। চুড়িগুলো পরপর জুড়ে নিন পছন্দসই আকারে। ফুলের মতো হতে পারে। হতে পারে ডায়মন্ড শেপ বা অন্য কোনও জ্যামিতিক আকার। প্রত্যেকটা চুড়ির নিচের দিকটায় ছোট্ট ছোট্ট রঙিন টাসল ঝুলিয়ে দিন। মনের মতো ডিজাইনে বসিয়ে নিন ফুলগুলো। এবার সবচেয়ে উপরের চুড়িটার সঙ্গে দেওয়ালে ঝোলানোর হুক জুড়ে নিলেই ওয়াল হ্যাঙ্গিং রেডি!
ল্যাম্পশেড: কাগজের মণ্ড অর্থাৎ পেপার পাল্প দিয়ে গড়ে নিতে পারেন পছন্দের আকার। তাকে রং করে গায়ে ডিজাইন এঁকে নিন মনের সুখে। এরপর একটা চৌকো বা ত্রিভুজ বোর্ড কিংবা ছোট কাঠের বাক্সের উপরে একটা ছোট্ট বাল্ব বসিয়ে উপরে ছাতার মতো ফিট করে নিন পেপার পাল্পের শেড। ব্যস!

ফুলদানি: বাড়িতে সবাই মিলে মটকা কুলফি খাওয়া হয়েছিল ক’দিন আগেই। দেখতে সুন্দর বলে রেখে দিয়েছিলেন মটকাগুলো। এবার সেগুলোকেই ভাল করে পরিষ্কার করে রং করে নিন। গায়ে এঁকে নিন পছন্দের ডিজাইন। এর পর একেকটা ছোট্ট ছোট্ট মটকা আলাদা আলাদা ভাবে রাখতে পারেন সেন্টার টেবিলের মাঝে একটা ছোট্ট ট্রে-তে। তাতে রাখতে পারেন ছোট্ট ছোট্ট ফুলের থোকা। অথবা চার-পাঁচটা মটকা একসঙ্গে, সারি বেঁধে বা নির্দিষ্ট ডিজাইনে জুড়ে নিতে পারেন। সেই অনুযায়ী সাজাতে পারেন ফুল।

অ্যাশট্রে: ফেলে দেওয়া চ্যাপ্টা টিনের কৌটো বা প্লাস্টিকের ছড়ানো কৌটো রং করে নিন সাজিয়ে নিন বাহারি নকশায়। কিংবা কাঠের টুকরো চৌকো ধাঁচে জুড়ে নিন। এবার রং করে কলমকারি বা মধুবনী ডিজাইন এঁকে নিলেই কায়দার অ্যাশট্রে তৈরি!
ফোটো স্ট্যান্ড অ্যালব্যাম: পুরনো টেবল ক্যালেন্ডার আছে নিশ্চয়ই বাড়িতে? মলাট এবং ভিতরের সব পাতার উপরে রং করে নিন। কিংবা সাঁটিয়ে নিন মোটা কাগজ। এর পর প্রতিটা পাতায় একেকটা ফোটোগ্রাফ বা তার প্রিন্টআউট লাগিয়ে সাজিয়ে নিন। নীচে ক্যাপশনে লিখতে পারেন কীসের ছবি বা পছন্দের কোনও কোট। তৈরি ফোটো স্ট্যান্ড অ্যালবাম, যা সাজিয়ে রাখতে পারেন বসার ঘরের টেবিলে। একেকটা ছুটিতে কোথাও বেরিয়ে আসার পরে এভাবেই তৈরি করুন না মেমোরি-কার্ড! বেড়ানোর দিনগুলো ফিরে দেখতে মন্দ লাগবে না কিন্তু!
