আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিন শেষের ক্লান্ত শরীর আর শান্ত পরিবেশের আবহে মধ্যরাতের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা, নাকি ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নতুন দিনের সতেজ উদ্যমে শারীরিক মিলন- কোন সময়ের সঙ্গম বেশি আনন্দময়? এই প্রশ্ন যুগ যুগ ধরে দম্পতিদের মনে উঁকি দিয়েছে। পছন্দটা একান্ত ব্যক্তিগত হলেও, এর নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞান, হরমোন এবং মনোবিজ্ঞানের জটিল খেলা। গবেষণা বলছে, মধ্যরাত এবং ভোর- দুই সময়েরই রয়েছে নিজস্ব আকর্ষণ এবং সুবিধা।

মধ্যরাতের আকর্ষণ
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, দায়িত্ব এবং উদ্বেগের শেষে মধ্যরাত নিয়ে আসে একরাশ শান্তি ও অবসর। এই সময়ে মন অনেকটাই ভারমুক্ত থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যরাতের মিলনের নেপথ্যে শারীরিক দিকের চেয়ে মানসিক সংযোগের ভূমিকা বেশি।

মানসিক নৈকট্য: দিনের শেষে যখন পৃথিবী শান্ত, তখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার, আবেগ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। এই মানসিক নৈকট্য শারীরিক মিলনকে আরও গভীর এবং অর্থবহ করে তোলে। এক্ষেত্রে অক্সিটোসিন বা ‘লাভ হরমোন’-এর ভূমিকা অনেকটাই বেড়ে যায়, যা বিশ্বাস ও ভালবাসার অনুভূতিকে দৃঢ় করে।

পরিবেশ: বাহ্যিক কোলাহল কম থাকায় মনঃসংযোগ করা সহজ হয়। ধীর, আবেগঘন এবং রোম্যান্টিক মিলনের জন্য মধ্যরাতের পরিবেশ আদর্শ।

অসুবিধা: এই সময় মিলনের একটা বড় সমস্যা হল ক্লান্তি। সারাদিনের পরিশ্রমে শরীর ও মন ক্লান্ত থাকলে যৌন মিলনের ইচ্ছা বা শক্তি, কোনওটাই পুরোপুরি থাকে না।

ভোরের উদ্দীপনা
অন্যদিকে, বিজ্ঞান এবং শরীরতত্ত্ব বলছে ভোরের কথাই। হরমোনের দৃষ্টিকোণ থেকে, ভোরের সময়টাই সঙ্গমের জন্য সবচেয়ে অনুকূল।
হরমোনের খেলা: গবেষণা অনুযায়ী, পুরুষ এবং নারী উভয়ের শরীরেই টেস্টোস্টেরন হরমোনের (যা যৌন ইচ্ছা বা লিবিডো নিয়ন্ত্রণ করে) মাত্রা সকালের দিকে সর্বাধিক থাকে। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের পর শরীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম পায়, ফলে যৌনশক্তি ও উদ্দীপনাও তুঙ্গে থাকে।
শারীরিক শক্তি: পর্যাপ্ত বিশ্রামের ফলে শরীর অনেক বেশি তরতাজা থাকে। ফলে মিলন অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী এবং শারীরিকভাবে আনন্দদায়ক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

অসুবিধা: প্রধান সমস্যা হল সময়। ঘুম থেকে উঠেই অফিস বা বাড়ির কাজে বেরিয়ে পড়ার তাড়া থাকে। এই ব্যস্ততার মধ্যে মানসিক সংযোগ তৈরি করা বা ধীরেসুস্থে মিলন উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ‘মর্নিং ব্রেথ’-এর মতো ছোটখাটো বিষয়ও অনেকের কাছে মিলনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
শারীরবৃত্তীয় দিক থেকে দেখলে, ভোরের সময়টাই সঙ্গমের জন্য সবচেয়ে অনুকূল, কারণ তখন কামনা নিয়ন্ত্রক হরমোনগুলি সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। তবে যৌনতা কেবল হরমোনের খেলা নয়। মানসিক সংযোগ এবং পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দিনের শেষে মানসিক আরাম যদি মধ্যরাতে বেশি থাকে, তবে সেটাই অনেকের কাছে সেরা সময় মনে হতে পারে।

সব মিলিয়ে, মিলনের সেরা সময় কোনটি, তার কোনও নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এটি দম্পতির জীবনযাত্রা, অভ্যাস এবং চাহিদার উপর নির্ভরশীল। যদি গভীর মানসিক সংযোগই প্রাধান্য পায়, তবে মধ্যরাত আদর্শ। আর যদি শারীরিক উদ্দীপনা এবং শক্তিই মুখ্য হয়, তবে ভোরের বিকল্প নেই। তবে সবচেয়ে ভাল উপায় হল, দুই সময়েরই সদ্ব্যবহার করা এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজেদের ‘সেরা সময়’ খুঁজে নেওয়া।