আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত কত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে চলেছে। যা কখনও ভয় ধরায়, কখনও বা অনুপ্রেরণা জোগায়। আবার কিছু ঘটনা যেন বিশ্বাস করতে দু'বার ভাবতে হয়। ঠিক যেমন ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশাল আউটব্যাকে এক অদ্ভুত ও চরম দুঃসাহসী ঘটনা ঘটেছিল। রিকি মেগি নামের এক ব্যক্তি সেখানে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন যেখানে তাঁর কাছে ছিল না কোনও খাবার, জল, জুতা বা এমনকী পোশাকও। অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক মরুভূমিতে একা তিনি টানা ৭১ দিন কাটিয়েছিলেন। এযেন মানবদেহের চরম পরিস্থিতিতে টিকে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতার নজির গড়ে তুলেছে।
কীভাবে বেঁচে ছিলেন রকি মেগি? মরুভূমিতে রকির কাছে কোনও ফল, সবজি বা রান্না করা খাবার ছিল না। তাই তিনি 'সার্ভাইভাল মোড'-এ চলে আসেন। নির্জন মরুভূমিতে তিনি খেয়েছিলেন ব্যাঙ, টিকটিকি, জোক, ও অন্য ছোট প্রাণী। এ ধরনের খাবার প্রাথমিকভাবে রকিকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করেছিল। পানীয় জলের জন্য প্রথমে বর্ষার জলের জলাশয়, জমে থাকা গর্তের জল ও শুকনো কলের জল ব্যবহার করেছিলেন। এমনকী চরম তাপ ও জলের অভাবে তিনি নিজের প্রস্রাবও পান করেছিলেন, যা ছিল জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায়।
খাবার ও জল ছাড়া থাকার ফলে রকির শরীর চরম দুর্বল হয়ে পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তাঁর ওজন প্রায় ৫৯ কেজি কমে গিয়েছিল। ৭১ দিনের পর স্টেশন‑ওয়ার্কারদের দল তাঁকে আবিষ্কার করে। তাঁরা দ্রুত রকিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর জীবন রক্ষা করা বিস্ময়কর ছিল। শরীরের প্রতিটি অঙ্গই চরম দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা ও বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তিই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
রকি মেগির অভিজ্ঞতা শুধু এক চরম পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার কাহিনি নয়, এটি মানবিক ধৈর্য, শক্তি এবং সংকল্পের এক নজির। আসলে সাধারণভাবে খাবার ও জল ছাড়া জীবন ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু বেঁচে থাকার উপায় ও চরম পরিস্থিতিতেও টিকে থাকার অন্যতম সহায় ইচ্ছাশক্তি। এই কাহিনি যেন মানবদেহের শক্তি ও মানসিক দৃঢ়তার শিক্ষার পরিচয় ঘটায়। রকি মেগির এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেখায়, খাবার ও জল ছাড়া মানুষের দেহ অত্যন্ত চরম পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে মানসিক দৃঢ়তা, ধৈর্য ও সংকল্পই প্রতিকূল বিপদের মধ্যে বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি।
